রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাঙ্গ হলো বাউল মিলনমেলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

সাঙ্গ হলো বাউল মিলনমেলা

‘হেলায় হেলায় দিন বইয়ে যায়, ঘিরে নিল কালে/ আর কি হবে এমন মানব জনম, বসব সাধু মেলে’— খালি গলায় আপন মনে একটানা গেয়ে চলেছেন সাঁইজির গান। সুর নয় যেন, বিলাপ ঝরছে মানিকগঞ্জ থেকে আসা লালন অনুসারী হাদি ফকিরের গলায়। দেশ-বিদেশের বাউল সাধুু-গুরুদের তিন দিনের মিলনমেলা ভেঙে যাচ্ছে। সাঁইজির প্রিয় ধাম ছেড়ে এবার ফিরতে হবে আপন নীড়ে, তাই হয়তো হাদি ফকিরের গলায় এই সুর। গতকাল মধ্যরাতে সমাপনী আলোচনা সভা ও সংগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়া বাড়িতে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। সাধু-গুরুদের বেশির ভাগ এরই মধ্যে আখড়া বাড়ি ছেড়ে গেছেন। ফাল্গুগুনের পূর্ণিমা তিথি তথা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ উৎসব উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। উৎসব শেষে গতকাল বাড়ি ফেরার সময় তাই তাদের কণ্ঠে বিষাদের সুর বেজে ওঠে। বিদায় বেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা প্রবীণ বাউল আলম শাহ বলেন, ‘সাঁইজির চরণ তলে কটা দিন পড়েছিলাম। এখন বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, কিন্তু মন তো চাইছে না বাড়ি ফিরতে। আরও কটা দিন থেকে যেতে পারলে ভালো হতো, মনটা কেমন করছে, আর যদি আসতে না পারি কোনো দিন।’

আরেক বাউল ইসলাম শাহ বলেন, ‘বাবা বাড়ি ফিরতে মন চাইছে না, ভাবছি আরও কটা দিন গুরুধামে থেকে যাব।’ মহিলা বাউল করিমন খাতুন বলেন, ‘বাড়ি ফিরে যাচ্ছি ঠিকই, মনটা পড়ে রইল আখড়া বাড়িতে। এখন থেকেই কার্তিক মাসের উৎসবের প্রহর গুনতে থাকব।’  এদিকে, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত লালন একাডেমিকে আরও কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন আখড়ায় আসা বাউল-সাধুরা। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাউল মুহাম্মদ আলী বলেন, নামেই লালন একাডেমি, এখানে বাউলদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। একাডেমি চালান স্যুট-বুট পরা লোকেরা। তিনি একাডেমির কমিটিতে বাউলদের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি আখড়া বাড়িতে বাউলদের জন্য একটি সেবাশ্রম স্থাপনের দাবি জানান। একটি সেবাশ্রম হলে বছরের অন্য সময় আখড়ায় আসা বাউলরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর