রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সহজ সুযোগ হারাচ্ছেন বাংলাদেশি পেশাজীবীরা

বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে মার্কিন আইনজীবী দিলি রাজ ভট্ট

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সহজ সুযোগ হারাচ্ছেন বাংলাদেশি পেশাজীবীরা

যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সহজ সুযোগ হারাচ্ছেন বাংলাদেশি দক্ষ পেশাজীবীরা। দেশ বঞ্চিত হচ্ছে রেমিট্যান্স থেকে। এমনকি নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অথচ দক্ষতাভিত্তিক অভিবাসনে মনোযোগী হলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে বহুগুণ। মার্কিন আইনজীবী দিলি রাজ ভট্ট গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের জন্য আবেদন করেন মোট ১৮ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৭৪০ জনই আবেদন করেছেন পারিবারিক কোটায়। মাত্র  ৬৫৩ জন পেশাজীবী হিসেবে আবেদন করেছেন। অথচ ভারতের প্রায় ২১ হাজার পেশাজীবী, পাকিস্তানের ২ হাজার, নেপালের দেড় হাজার পেশাজীবী কোটায় অভিবাসিত হয়েছেন। একইভাবে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হওয়া মোট ১৩ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১২ হাজার ৭১১ জন গেছেন পারিবারিক অভিবাসনের প্রক্রিয়ায়। পেশাজীবী হিসেবে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫৩ জন। ২০১৪ সালে মোট ১৪ হাজার ৬৪৫ জনের মধ্যে ১৩ হাজার ৯০৩ জন বাংলাদেশি করেছেন পারিবারিক অভিবাসন এবং মাত্র ৫৬০ জন পেশাজীবী হিসেবে। অথচ ভারত পেশাজীবী কোটায় আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হয়েছে ২০১৪ সালে ৪১ হাজার এবং ২০১৫ সালে ২৭ হাজার ৫১৪ জন। পরিসংখ্যান উল্লেখ করে দিলি রাজ ভট্ট জানান, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ফ্যামিলি অভিবাসনকেই যেন একমাত্র ক্ষেত্র মনে করা হয়। কিন্তু এর বাইরে আরও যে নানা ক্যাটাগরিতে দক্ষ ব্যক্তিরা বাংলাদেশে বসেই স্বল্প দিনে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন তা অনেকেই জানেন না। কিন্তু নেপাল, ভারত, পাকিস্তানিরা পারিবারিক এই ভিসার বাইরে অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বেশি আগ্রহী এবং সেই সূত্রেই তারা সহজে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। অথচ সৌভাগ্যবান রাষ্ট্র হিসেবে ‘ট্রিটি কান্ট্রি’ বাংলাদেশ ই-টু ভিসার ব্যবহার করে অভিবাসনের সংখ্যা বাড়াতে পারত বেশ সহজেই। সেই সঙ্গে বিশাল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী থাকা বাংলাদেশ এইচ-ওয়ান বি ক্যাটাগরির ভিসার ব্যবহারও করছে কম। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে পারলে রেমিট্যান্স আয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা আয়ের তুলনায় কয়েকশ গুণ বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যে একজন দক্ষ শ্রমিকের বেতন যদি ৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে একই ক্ষেত্রে সে যুক্তরাষ্ট্রে পেতে পারে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা এবং উন্নত জীবন। বিশেষ করে স্টুডেন্ট ভিসায় ফোকাস করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলেও মনে করেন এই আইনজীবী। দিলি রাজ ভট্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে মিডিয়ারও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক তথ্য আছে যেগুলো সাধারণ মানুষ পুরোপুরি পান না। নানা রাজনৈতিক বক্তব্য শুনে তাদের মনের মাঝে প্রথমেই ইমিগ্রেশন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে যায়। অথচ কাগজপত্র ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে পারলে ভিসা প্রসেসিং অনেক সহজ হয়। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া যত কঠিন ততটাই আবার সহজ। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক ল ফার্ম ভট্ট ল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের অ্যাটর্নি দিলি রাজ ভট্ট। এর আগে তিনি নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ল ফার্ম ‘দ্য মায়ার্স ল’র হয়ে কাজ করেন।

সর্বশেষ খবর