রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

গণিত-ইংরেজিতে দুর্বল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার হালচাল ২৪

আকতারুজ্জামান

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানে বেহাল দশা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা গণিত ও ইংরেজিতে বেশি দুর্বল। শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাস নেন না এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মাঠপর্যায়ে পাঠদানের বেহাল দশার কথা সম্প্রতি স্বীকার করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানও। 

মোস্তাফিজুর রহমান গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। এ সময় চতুর্থ শ্রেণির কয়েক ছাত্রকে ইংরেজিতে ‘ফোর’ বানান লিখতে বলেন। কিন্তু কেউই ফোর বানান লিখতে পারেনি। পরে ফোর বানান মুখে বলতে বললেও কোনো ছাত্র তা পারেনি। এ সময় মন্ত্রী নিজেই বলেন, মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র আসলে খুবই করুণ। এই বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে আমি খুবই মর্মাহত। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। অথচ তারা শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান করেন না। তবে বাড়িতে বাবা পড়ায় এমন এক বাচ্চাকে ইংরেজিতে ‘থ্রি’ বানান করতে বললে ছাত্রটি লিখতে পেরেছে। কিন্তু বাকি প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থীকে থ্রি বানান লিখতে বললেও তারা  লিখতে পারেনি।

ইংরেজি আর গণিতে কম দক্ষতা থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা গেছে। ২০১৭ সালের প্রাথমিকে ২০১৬ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাসের হার কমেছে। এ ছাড়া ইবতেদায়ীতেও প্রায় ৩ শতাংশ পাসের হার কমেছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইংরেজি আর গণিতে কম ফলাফলের কারণেই সামগ্রিক ফলে প্রভাব পড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে ক্লাসেও আসেন না। গত বছরের ২৩ মার্চ গণশিক্ষামন্ত্রী দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তখন ঘড়ির কাঁটায় ১১টা ৪০ মিনিট। তখনো বিদ্যালয়ের ঘরগুলো বন্ধ। শিক্ষকের আগমনের অপেক্ষায় আছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। এ দৃশ্য দেখে মন্ত্রী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোন করলে পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। তখনো অনুপস্থিত দুই সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান ও রেজাউল ইসলাম। এ সময় মন্ত্রী প্রধান শিক্ষককে ভর্ত্সনা দিয়ে নিজেই একটি ক্লাস নেন ছাত্র-ছাত্রীদের। দেশের উপজেলা আর ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই স্কুলগুলোর এমন অবস্থা বলে জানা গেছে। এসব স্কুলে পাঠদানে শিক্ষকদেরই কোনো আগ্রহ নেই। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, ‘এখনো উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগ থাকায় তারা ছাত্রছাত্রীদের যথাযথভাবে পাঠদান করতে পারছেন না। এমনকি পঞ্চম শ্রেণির  গণিতে অনেক শিক্ষকই দুর্লভ। এক্ষেত্রে তারা নোট বা গাইডের সহায়তা নেন।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল নানা ব্যাপারে বলেন, সারা দেশে প্রাথমিকে শিক্ষার মান সমান খারাপ নয়। তবে অনেক স্থানেই ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি আর গণিতে তুলনামূলক কম ভালো করছে। দেশের কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে এমনটি দেখেছি। ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদি ভালো মানের হয় আর ৪০ শতাংশ যদি খারাপ মানের হয় তবে সেটাকে অবশ্যই ভালো বলা যায় না। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পাঠদান উদ্বুদ্ধকরণ সভা করছি। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা যদি ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিবেদিত হন তবে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন অসম্ভব নয়। আশা করছি, পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর