মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসিতে চলছে ভোটের কেনাকাটা

এপ্রিলের মধ্যে পাঁচ সিটি জুনে সংসদ ও নভেম্বরে উপজেলা নির্বাচনের ব্যালটের কাগজ কেনা হবে

গোলাম রাব্বানী

ইসিতে চলছে ভোটের কেনাকাটা

একাদশ জাতীয় সংসদ, পাঁচ সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কেনাকাটা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে এপ্রিলের মধ্যে পাঁচ সিটি, জুনের মধ্যে সংসদ ও নভেম্বরের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। নির্বাচনী মালামালের মধ্যে— ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। আর ইতিমধ্যে এসব নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। এদিকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাগজ কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রধান উপকরণ ব্যালট পেপার। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজের প্রয়োজন হয়, তা ভোটের আগেই সংগ্রহ না করলে সংকটও দেখা দিতে পারে। আর নির্বাচন কমিশন কাগজ কেনার জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে থাকে। তারা বলেন, এপ্রিলের মধ্যে কেনা হবে পাঁচ সিটির ব্যালট পেপারের কাগজ। জুনের মধ্যে কেনা হবে সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ। আর উপজেলা নির্বাচনের জন্য ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার কাজ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য ইসি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ সিটি নির্বাচনের জন্য ৮৫২ রিম গোলাপি মুদ্রণ কাগজের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৩৩৩ রিম কাগজ মজুদ রয়েছে, বাকি ৫১৯ রিম সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় ৮ মার্চ থেকে ২৩ অক্টোবর। এক্ষেত্রে এপ্রিল মাসের মধ্যে কাগজ সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি; তথা আগামী ৮ থেকে ১১ মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে। যা জুন মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। আর পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামী বছরের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। এ বছরের ডিসেম্বর থেকে মুদ্রণ কাজ শুরুর সম্ভাব্য সময় দিয়েছে ইসি। এ নির্বাচনে ১ লাখ ২০ হাজার রিম কাগজ দরকার পড়বে। সেক্ষেত্রে নভেম্বরের মধ্যে মজুদ নিশ্চিত করতে চায় অধিদফতর।

একাদশ সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও পাঁচ সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় বাজেটে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ চাইবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা- এ দুই খাতে ব্যয় বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা খাতে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক, নির্বাচনী মালামাল (স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি ইত্যাদি) কেনায় ব্যয় হবে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল, মনিটরিং সেল, প্রচারণা, ভোট কেন্দ্র-ভোটকক্ষ নির্মাণ, কক্ষ সংস্কার, ভোট কেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোট কেন্দ্রের মনোহারি দ্রব্য কেনা, পরিবহন খরচ, কর্মকর্তাদের ডাক, তার, বার্তাবাহক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী কেনায়ও অর্থ ব্যয় হবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী ফলাফল আদান-প্রদান, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও মামলা পরিচালনা, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জ্বালানি খরচ, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের যাতায়াত ব্যয় রয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০ খাত রয়েছে।

এপ্রিল-নভেম্বরের মধ্যে কেনা হবে ব্যালটের কাগজ : একাদশ সংসদ, পাঁচ সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাগজ কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। গতকাল অধিদফতরের বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিসের উপ-পরিচালক ছরোয়ার হোসেন এক চিঠিতে ইসি সচিব বরাবর আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে শুধু কাগজ কেনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ইসির প্রস্তুতিমূলক এক চিঠিতে অধিদফতরকে বলা হয়, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব নির্বাচন হলেও তিন ভোটকে (সংসদ, সিটি ও উপজেলা) সামনে রেখে এ বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে সব কাগজ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতর সোমবার জানায়, অর্থ পেলে সব কার্যক্রম নেওয়া হবে।

পিপিআর মেনে মালামাল সংগ্রহে কয়েক মাস সময় লাগে উল্লেখ করে অধিদফতর জানায়, নির্বাচন শুরুর কমপক্ষে ৫-৬ মাস আগেই কাগজ সংগ্রহের যাবতীয় কার্যক্রম নেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে একাদশ সংসদের মুদ্রণ কাজ শুরুর অন্তত ৩ মাস আগেই কাগজের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। ইসি ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে কাগজ সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত অধিদফতর টেন্ডার কার্যক্রম শুরু করতে পারে না- এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাগজ কেনাকাটায় ৩৫ কোটি টাকা মহাপরিচালকের অনুকূলে বরাদ্দ চাইছে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর