শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিন গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে নারী

বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজনীতির মাঠ ও অর্থনীতির সমীকরণ থেকে শুরু করে খেলাধুলায় দুর্দান্ত গতিতে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারী। এই অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ নয়, বন্ধুর। এখনো নারীর প্রতি সহিংসতায় কেঁপে ওঠে বিশ্ব বিবেক। তাই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং নারীকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে ‘সময় এখন নারীর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন এ বৈঠকের আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল নিউজ টোয়েন্টিফোর। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন বর্তমান ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য, শিক্ষক, সাহিত্যিক, পুলিশ, ডাক্তার, ফুটবলার, ক্রিকেটার, আলোকচিত্রী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

নারীদের অগ্রগতি এবং বাধা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, নারী ও শিশুরা অনেক সময় পরিবারের কাছেই নিরাপদ নয়। শুধু পুরুষের নয়, নারীরও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। নারী-পুরুষ প্রতিপক্ষ নয় বরং সমকক্ষ হয়ে মানবিক মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত        করেন বক্তারা।

আলোচনার স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি রাজনীতি, অর্থনীতি ও নেতৃত্বে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারী ক্রিকেটাররা, ফুটবলাররা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশের খেলোয়াড়দের পরাস্ত করছে। তখন আমরা আশার আলো দেখি। আমরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলি। কিন্তু এখনো নারীকে অর্থের অভাবে রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে হয়। আমরা নারী দিবসের রং নিয়ে চিন্তা করি। রং বা দিবস তো দূরের কথা, এখনো প্রত্যন্ত এলাকার নারী তার ন্যূনতম অধিকারের কথাও জানে না। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘সময় এখন নারীর’— এ কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রাম ও নিম্নবর্গের নারীদের অবস্থা শোচনীয়। সমাজকে বদল করতে হবে। তৃণমূল থেকেই পরিবর্তন শুরু করতে হবে। এ জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, নারীরা সব ধরনের পেশায় নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। নারীর ক্ষমতায়নকে মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে।  সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী নিলোফার চৌধুরী মণি বলেন, একজন নারী হওয়ায় প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। দলের মধ্যে ধাক্কা খেয়েছি। স্থানীয় সরকার প্রশাসনে নারীরা এখনো পিছিয়ে। কবি শামীম আজাদ বলেন, মা একই কোলে ছেলে ও মেয়ে সন্তানকে বড় করে তোলে। ছেলেকে ঘুমপাড়ানি গানের সঙ্গে মস্তিষ্কে প্রবেশ করাতে হবে মানুষ হওয়ার বীজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, যে নারীকে আপনি সফল বলছেন তার সাফল্যের পেছনেই অনেক কাঁটা-নুড়ি বিছানো। এর মধ্য দিয়েই নারী এগিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান বলেন, আমি নারীবাদ-পুরুষবাদে বিশ্বাসী নয়। নারী-পুরুষ সমানতালে এগিয়ে গেলেই এ সমাজ এগিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা বিভাগের চেয়ারপারসন রূপা চক্রবর্তী বলেন, নারীরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের অন্য কেউ। ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ার বলেন, নারীরা নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। পরিবারের অন্য সবার সবকিছু খেয়াল রেখে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না তাদের। ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক কামরুন নাহার ডানা বলেন, পরিবারে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই মানুষ হিসেবে বড় করতে হবে। তাদের শেখাতে হবে ছেলে-মেয়ে এক। সম্পত্তির বণ্টনটাও সমান হতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহিমা আক্তার লাকি বলেন, নারীর লড়াই শুরু হয়ে গেছে। নারীকে এখনো প্রমাণ দিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ ছেলেদের ক্ষেত্রে আগেই ভাবা হয়, সে ছেলে, সে পারবে। ক্রিকেটার সাথীরা জাকির জেসি বলেন, জাতীয় দলে খেলে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছি তখন বাহবা দিয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জনপ্রিয়তা কম। কারণ আমরা শুরু করেছি অনেক পরে। সাবেক ফুটবলার পিংকী সানোয়ার বলেন, আমি পরিবারের সহযোগিতায় জাতীয় দলে খেলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নারীর প্রতি অবহেলার কারণে খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছে। জাতীয় সংসদের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক লাবণ্য আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকে। সমাজে এগিয়ে যেতে হলে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে সাফল্য এসে ধরা দেবে। আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান বলেন, সময়টা এখনো নারীর নয়। তাহলে এত নির্যাতিতা নারীর ছবি তুলতে আমাদের বার্ন ইউনিটে দৌড়াতে হতো না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর