শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষক সংকটে সরকারি কলেজ পদশূন্য তিন হাজারেরও বেশি

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলছে জোড়াতালি দিয়ে

আকতারুজ্জামান

দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি কলেজগুলোতেও শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় তিন সহস্রাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কোনো কোনো কলেজে বাইরে থেকে শিক্ষক ভাড়া করে সচল রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম। সূত্র বলছে, উপজেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ কলেজেই রয়েছে শিক্ষকের স্বল্পতা। আর বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়েও সরকারি কলেজ রয়েছে। তাই এসব কলেজেও শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিশেষ বিসিএসের (শিক্ষা ক্যাডার) আয়োজন করা উচিত, বলছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুজন সহযোগী অধ্যাপক, ১২ জন সহকারী অধ্যাপক ও ১৮ জন প্রভাষক থাকার কথা থাকলেও জানা গেছে ১২ জন প্রভাষকের পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। শিক্ষক সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ কলেজে শিক্ষাদান কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সরকারি হাজী এ বি কলেজে আট সহযোগী অধ্যাপক, ১৩ সহকারী অধ্যাপক ও ২১টি প্রভাষকের পদ থাকলেও সূত্র জানায় চারজন সহযোগী অধ্যাপক, পাঁচজন সহকারী অধ্যাপক ও ১৩ জন প্রভাষকের পদই শূন্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে এ কলেজটিতেও। মাউশি  সূত্র বলছে, শিক্ষক প্যাটার্ন অনুযায়ী স্নাতক কোর্সে প্রতিটি বিষয়ে সাতজন শিক্ষক এবং স্নাতকোত্তর বিষয়ের জন্য ১২ জন শিক্ষক থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক কলেজে এসবের অর্ধেকও নেই। মাউশি সূত্রমতে, দেশে ৩২৭টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে প্রভাষক পদে আনুমানিক আড়াই হাজার, সহকারী অধ্যাপক পদে ২৭০টি পদ খালি রয়েছে। এ ছাড়া সহযোগী অধ্যাপকের ১৫০টি ও অধ্যাপক পদে ৭০টি পদ শূন্য রয়েছে বলে জানা গেছে। মাউশির কলেজ শাখা সূত্র জানায়, কলেজগুলোতে শিক্ষক বদলি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। নিয়মিতই শিক্ষক এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়। বদলির কারণে শিক্ষক শূন্য পদের সংখ্যার তারতম্য হয়। ম্যানুয়ালি শিক্ষক বদলি হওয়ার কারণে কলেজগুলোতে শিক্ষকের শূন্য পদ সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। শিক্ষক বদলির জন্য অনলাইনে সার্ভারের মাধ্যমে মাউশি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষক শূন্য পদের সংখ্যা নির্দিষ্ট বলা যাবে। তবে আনুমানিক তিন সহস্রাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে বলে তারা জানান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজগুলোতে শিক্ষকের সংকট অস্বীকার করা যাবে না। অনেক উপজেলায় বিভিন্ন পদে শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। বিভিন্ন কলেজ বাইরে থেকে ভাড়া করা শিক্ষক এনে জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারে ১২ হাজার পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে একটি বিশেষ বিসিএসের (শিক্ষা ক্যাডার) মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ করা যেতে পারে। শামছুল হুদা আরও বলেন, ৩৬ ও ৩৭ বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগদান করলে শিক্ষকদের অনেক শূন্য পদই পূরণ হবে। তবে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিশেষ বিসিএসের বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর