শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ফুডব্যাংকিং

জিন্নাতুন নূর

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ফুডব্যাংকিং

রাত ১টা ৩০ মিনিট। অধিকাংশ শহরবাসী যখন ব্যস্ত দিন শেষে ঘুমে অচেতন তখনো একদল মানুষের ব্যস্ততা কমেনি। নগরীর ক্ষুধার্ত, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর পেটে খাবার জোগাতে মধ্যরাতেও কাজ করে যাচ্ছে একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবক। তারা বেসরকারি সংগঠন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের ‘ফুড ব্যাংকিং’ নামক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন—  বিয়ে, জন্মদিনে নিমন্ত্রিত অতিথিদের খাবার শেষ হওয়ার পর বেচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করেন। পরে এই খাবার ঢাকার বিভিন্ন ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এর বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবকরা পান ছিন্নমূল মানুষগুলোর অমূল্য হাসি। অপচয় রোধে ব্যতিক্রমী এই ফোন সেবার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত দু’শটিরও বেশি বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানের খাবার সংগ্রহ করে প্রায় ৫০ হাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের কথা, সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুটি অনুষ্ঠানের খাবার সংগ্রহ করে তা ৪০০ জন মানুষের মধ্যে বিতরণ শেষে যখন স্বেচ্ছাসেবকরা ক্লান্ত, ঠিক রাত দেড়টায় খাবার সংগ্রহের জন্য এই স্বেচ্ছাসেবক দলটির কাছে তৃতীয়বারের মতো আরেকটি ফোন আসে। ফোনটি আসে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের এক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন কনের বাবা, সংস্কৃতিমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান নূর। মন্ত্রী স্বেচ্ছাসেবকদের জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০০ লোকের খাবার বেচে গেছে। আর খাবারগুলো তিনি অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করতে চান। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের আট কর্মী সে ফোন পেয়ে ক্লান্তি ঝেরে ক্ষুধার্তের জন্য খাবার সংগ্রহে গলফ ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর গলফ ক্লাব থেকে সংগ্রহকৃত খাবারের প্যাকেটগুলো নিয়ে দলটি রওনা হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভাসমান মানুষের কাছে। সেই খাবার বিতরণ চলে মধ্যরাত থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। বেশ কিছু দিন আগে কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের বেচে যাওয়া ৩০০ মানুষের খাবারও এই স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে তুলে দেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে এন্ড্রু কিশোর ঢাকা গলফ ক্লাব থেকে ফোন করেন ‘ফুড ব্যাংকিং’ নম্বরে। এরপর রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত খাবারগুলো সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়। খাবারগুলো পান্থপথে রাস্তায় শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষদের পেট ভরায়। এর আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার থেকে এই স্বেচ্ছাসেবকরা জাঁকজমকপূর্ণ এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ৮০০ অতিথির বেচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করেন। খাবারের তালিকায় ছিল কাচ্চি, গরুর মাংস, গ্রিল, নান ও জর্দা। এই খাবারগুলো পরে পৌঁছে যায় কমলাপুর রেলস্টেশনে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের পাতে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একদিকে যেমন অপচয় রোধ হচ্ছে অন্যদিকে ক্ষুধার্ত মানুষেরও উদরপূর্তি হয়। প্রচেষ্টা ফুড ব্যাংকিংয়ের মোবাইল নম্বর-০১৮৪২০০২০২৩-তে একটি কল দিয়েই অভুক্তদের একবেলা পেটভরে কোরমা-পোলাও খাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন যে কেউ। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, সংগঠনটিতে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের লেখাপড়া ও কর্মজীবনের পাশাপাশি নিজস্ব ভালোলাগা থেকেই এ কাজটি করছেন। প্রচেষ্টার সাবেক সভাপতি জগদীশ চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৬ সালের মে মাসে আমাদের ফুড ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা ও সিলেটের সামাজিক অনুষ্ঠানের খাবার সংগ্রহ করে গরিবদের মঝে বিতরণ করা হচ্ছে। খাবার বেশি হলে দুই-তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খাবার পৌঁছে দিই। ভবিষ্যতে দেশব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার করার ইচ্ছা আছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর