শিরোনাম
সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুতে বসল তৃতীয় স্প্যান

মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি

পদ্মা সেতুতে বসল তৃতীয় স্প্যান

পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যানটি গতকাল সকালে পিলারের ওপর উঠানো হয়েছে। এতে দৃশ্যমান হলো ৪৫০ মিটার পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তে ৩৯ নম্বর ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর সেতুর তৃতীয় স্প্যানটি বসানো হয় গতকাল সকাল ৯টার কিছু আগে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, সকাল ৯টার আগেই ৭সি নামের তৃতীয় স্প্যান ৩৯ নম্বর ও ৪০ নম্বর পিলারে উঠিয়ে রাখা হয় এবং স্থায়ীভাবে বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। এর আগে স্প্যানটিকে শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই পাজা করে তুলে বিকালে সেতুর ৩৫ নম্বর পিলারের সঙ্গে নিয়ে রাখে। ৩৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার বিশাল এই জাহাজ চলাচলে পদ্মা নদীর পানির গভীরতা ঠিক রাখতে নির্দিষ্ট চ্যানেলে ড্রেজিং অব্যাহত ছিল। তাই এবার কোনো বিরতি ছাড়াই সরাসরি জাহাজটি এসে ৩৪ নম্বর ও ৩৫ নম্বর পিলারের মাঝখানে নোঙ্গর করা হয়। পরে শনিবার এটিকে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাছে নিয়ে রাখা হয় এবং গতকাল এটিকে দুই পিলারের ওপর উঠানো হয়। এতে বাস্তবে দৃশ্যমান হলো সাড়ে ৪০০ মিটার পদ্মা সেতু। তিনি আরও জানান, এখন স্প্যানটির ‘পজিশনিং’, ‘এডজাস্টিং’ চলছে। এর পাশাপাশি ওয়েলডিংয়েরও কাজ চলছে। বিয়ারিংয়ের ওপর এর পজিশন ঠিক করতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান ক্রেনে ঝুলিয়ে রাখা স্প্যানটি খুঁটিতে বসানোর পর ওয়েলডিংয়ের কাজ শুরু হয়। ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলার দুটিতে থাকা স্প্যানের সঙ্গে ওয়েলডিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে এই স্প্যানটি। পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং ওজন ৩ হাজার ১৪০ টন। মোট ৪২টি পিলারের ওপর স্প্যান বসবে ৪১টি। প্রথম স্প্যান বসানোর প্রায় চার মাস পর দ্বিতীয় স্প্যান বসানো হলেও তৃতীয় স্প্যানটি বসছে মাত্র দেড় মাস পর। এ ব্যাপারে প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির আরও বলেন, স্প্যান বসানোর বিষয়টি নির্ভর করে পিলারের কাজ শেষ হওয়ার ওপর। এখানে (কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে) যথেষ্ট পরিমাণ স্প্যান রয়েছে। যা ইতিমধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তাই পিলারের কাজ শেষ হওয়া সাপেক্ষে স্প্যান বসাতে যাবে। চতুর্থ স্প্যানটি আগামী এক মাসের মধ্যে বসানো যাবে বলেও তিনি আশা করেন। চতুর্থ স্প্যানটিও বসবে জাজিরা প্রান্তে। তাই ৪১ নম্বর পিলারের কাজও চলছে দ্রুত। শিগগিরই এর পিলারের কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া সার্বিক পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। চলছে নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ফোর লেন সড়কের কাজসহ আনুষঙ্গিক সব কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যে নদীতে ১২২ পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। আরও ১১টি পাইলের বটম সেকশন সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের ১৭২টি পাইলের মধ্যে ৮৯টি পাইল বসে গেছে। অন্যান্য কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই পিলারের কাজ সম্পন্ন হলেই বসবে চতুর্থ স্প্যানটি। এতে একসঙ্গে ৬০০ মিটার পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে। এদিকে এগিয়ে চলছে মাওয়া প্রান্তের পিলারের কাজও। ওপরে উঠে গেছে মাওয়া প্রান্তের ৩ নম্বর পিলার। ৪ ও ৫ নম্বর পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও মাওয়া প্রান্তে ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ২১, ২২, ২৩, ৩৩, ৩৪ এবং ৩৬ নম্বর পিলারের কাজ এগিয়ে চোখে পড়ার মতো হয়েছে। এসব পিলারগুলোও আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু এখন ক্রমেই আরও বেশি দৃশ্যমান হবে। একের পর এক পিলার ওঠার কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের কান্ট্রি প্রধান মি. রেম জানিয়েছেন, চীন ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের দক্ষ শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা পদ্মা সেতুর এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞে কাজ করছেন। এ ছাড়া সেতুতে ব্যবহৃত মালামাল যেখান থেকেই আনা হোক, যথাযথ মান নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড সেতু কাজের তদারকি করছেন। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার তথা সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত হবে এবং উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর