সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজশাহীর ছয়টি আসনেই বিএনপি প্রার্থীর ছড়াছড়ি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর ছয়টি আসনেই বিএনপি প্রার্থীর ছড়াছড়ি

গোদাগাড়ী-তানোর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-১ আসন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব জহুরুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান মার্কনি ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্মসম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শাহীন। ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসনে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দুই দফায় মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তবে জঙ্গি মদদের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। মূলত এর পর থেকে ওই আসনটিতে আধিপত্য হারান তিনি। তবে আবারও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন আমিনুল হক। রাজশাহী-২ আসনটি আগে পবা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এ সময় শুধু সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে এ আসনটি গঠিত হয়। এ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার এমপি নির্বাচিত হন। তবে এবার এ আসনটিতে মিনুকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী কবীর হোসেন। তারা এবার সদর আসনটিতে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। তবে মিজানুর রহমান মিনু জানান, দল নির্বাচনে গেলে তাকেই সদর আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি মাঠে কাজ করছেন। কবীর হোসেন জানান, তিনি সদর আসনে এমপি ছিলেন। আগামীতেও দলের মনোনয়ন চাইবেন। পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৩ আসন। এ আসনটির বড় একটি অংশ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের চারপাশ ঘিরে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এ আসনটিও সব সংগঠনের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। রাজশাহী নগরীতে কর্মসূচি সফল করার জন্য এ আসনটি থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সবচেয়ে বেশি সমাগম ঘটে। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন হাফডজন নেতা। এর মধ্যে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কামরুল মনির, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী মহানগরী বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রায়হান। তবে এর মধ্যে শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে আছেন শফিকুল হক মিলন। সিটি নির্বাচনে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ছাড় দেওয়ায় দলে শীর্ষ পর্যায় থেকে মিলনকে ওই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখনো সেই নির্দেশ বলবৎ আছে বলে জানান শফিকুল হক মিলন। তবে রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত জানান, তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। আসনটি উদ্ধারে দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকে মনোনয়ন দেবে। এখনো কোনো আসনে কাউকে প্রার্থী হিসেবে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত নাম রাজশাহীর বাগমারা। রাজশাহী-৪ আসনটি ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে। আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও সেই বিরোধকে খুব একটা কাজে লাগাতে পারেনি বিএনপি। বাগমারায় বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন সাবেক এমপি আবু হেনা, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল গফুর, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রদল নেতা আশফাকুর রহমান শেলী ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমেরিকাপ্রবাসী জাহিদ দেওয়ান শামীম। আবু হেনা দল থেকে বহিষ্কৃত। ফলে নতুনরা এখানে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং করছেন। জেলা বিএনপি সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু জানান, তিনি বাগমারার মানুষ। ফলে স্থানীয় ভোটাররা তাকে ভালোভাবেই নেবেন। সে লক্ষ্যে তিনি অনেক আগেই কাজ শুরু করেছেন। তবে দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে জানান তিনি। পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৫ আসন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এ আসনে এমপি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে এ আসনের এমপি ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ নেতা প্রয়াত আয়েন উদ্দিন। এরপর ১৯৮৮ সালে এমপি হন জাতীয় পার্টির মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। ১৯৯১ সালে এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক এমপি হন। ’৯৬ সালের নির্বাচনে এমপি হন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা। ২০০১ সালেও নাদিম মোস্তফা পুনর্নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাদিমের পরিবর্তে বিএনপি থেকে পুঠিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও দারা পুনর্নির্বাচিত হন। এবার নাদিম ছাড়াও এ আসনটিতে মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি গোলাম সাকলাইন, পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক ও দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু।

সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা বলেন, ‘পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে বিএনপি শক্তিশালী। ইতিমধ্যে আমরা দুই উপজেলায় বিএনপির প্রায় ৫২ হাজার সদস্য করেছি। নেতা-কর্মীরা আমার পাশে আছেন। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।’

নির্বাচন সামনে রেখে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, রমেশ দত্ত, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ এ আসনটিতে শক্ত প্রার্থী। আগামীতে দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী তিনি। এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সাবেক ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। তিনি জানান, রাজপথের আন্দোলনে তিনি সবসময় মাঠে ছিলেন। ফলে দল তাকে মূল্যায়ন করবে।

সর্বশেষ খবর