বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

শত শত একর জমি রোহিঙ্গাদের দখলে

আবাদি খাস জমিতেও চলছে বসতি স্থাপন

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

শত শত একর জমি রোহিঙ্গাদের দখলে

উখিয়া ও টেকনাফের হাজার হাজার একর সরকারি পাহাড়ি বনভূমি দখলের পর এখন শত শত একর ফসলি জমিতে বসতি স্থাপন করছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি ছাড়াই জমি কিনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে অবস্থাপন্ন রোহিঙ্গারা। একইভাবে প্রভাবশালীদের মদদ পেয়ে আবাদি খাস জমিও দখলে নিচ্ছে তারা। ফলে এই অঞ্চলের বনভূমি উজাড় হওয়ার পর এবার ফসলি জমিও উজাড় হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। আইনে না থাকলেও যারা এই জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে যুক্ত, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানালেন উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল সিদ্দিক। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপির রোহিঙ্গা নিধন-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার উখিয়া ও টেকনাফের ৩ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে অস্থায়ীভাবে। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে সরকারি বরাদ্দের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি পাহাড়ি বনভূমি দখল করে বসতি শুরু করেছে। তারপর গত ২-৩ মাস ধরে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী মৌজার বেশ কিছু ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব জমি চড়ামূল্যে রেজিস্ট্রি ছাড়াই বিক্রি বা হাতবদল হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারও নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ লাগে বিধায় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের ধারেকাছেও যান না ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো পক্ষই। বালুখালী ১ নম্বর অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মিয়ানমারের বুছিদং  থেকে আসা মোহাম্মদ হাকিমের। তিনি ক্যাম্পের পাশে ফসলি জমির ওপর নবনির্মিত একটি মসজিদ দেখিয়ে বলেন, ‘এই মসজিদের জন্যই জমিগুলো কেনা হয়েছে। মসজিদ করার পর বাকি জমিগুলোতে এখন বাড়িঘর বানানো হচ্ছে। আমরা বর্তমানে পাহাড়ের বেশ উঁচু ও ঢালু জায়গায় রয়েছি। বর্ষার সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বর্ষা শুরুর আগেই আমাদের এখানে চলে আসতে হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীর আশপাশের বেশ কিছু ফসলি জমিতে ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার নিজস্ব ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেছে। কেউ কেউ নির্মাণাধীন রেখেছে তাদের বসতঘর। আবার সরকারি খাস জমি অথচ আবাদি— এ ধরনের কিছু জমিও স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের দখল দিয়েছে। সেখানেও রোহিঙ্গারা দেদার বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেছে। এভাবে প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় সাধারণ মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির মুখে পড়েছে। জমিজমা নিয়ে কিছুদিন পরই শুরু হবে ঝগড়া-বিভেদ। কারণ, রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই এখানে জমির মালিক হতে পারবে না। তা জেনেও তারা মুখের কথায় জমি কিনছে এবং স্থানীয় কেউ কেউ বিক্রিও করছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে কী হবে তা অনুমান করতেও গা শিউরে উঠছে।’ ফসলি জমিতে বসতি নির্মাণ প্রসঙ্গে উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল সিদ্দিক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এখানে কোনো জমি ক্রয়-বিক্রয় করার অধিকারও নেই, আইনও নেই। তারা নির্দিষ্ট ক্যাম্পের বাইরে ঘরবাড়িও করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি, অনেককে উচ্ছেদ করে ক্যাম্পেও পাঠিয়ে দিয়েছি। স্থানীয় যারা রোহিঙ্গাদের এই বেআইনি কাজে সহযোগিতা করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

সর্বশেষ খবর