বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেয়ের বিমানে চড়ার সাধই কাল হলো

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার অভিশপ্ত বিমানে ছিল গাজীপুরের শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের ফারুক হোসেন প্রিয়ক দম্পতি ও তাদের শিশুকন্যা প্রিয়ংময়ী তামাররা। প্রিয়ংময়ীর সাধ হয়েছিল বিমানে চড়ার। একমাত্র সন্তানের সাধ পূরণে অভিশপ্ত বিমানের যাত্রী হয়েছিল প্রিয়ক দম্পতি। কিন্তু কে জানত প্রিয়ংময়ীর প্রথম বিমান যাত্রা হবে তার শেষ যাত্রা। তার বিমানে চড়ার সাধ শেষ পর্যন্ত কাল হলো। বাবা প্রিয়ক ও মেয়ে প্রিয়ংময়ী আর বেঁচে নেই। প্রিয়ংময়ীর মা গুরুতর আহত অবস্থায় কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই অভিশপ্ত বিমানে প্রিয়কের সহযাত্রী হয়েছিলেন তার মামাতো ভাই নগরহাওলা গ্রামের মেহেদী হাসান মাসুম। আর মাসুমের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তার। গতকাল দুপুরে বাবা-মেয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বিশেষ বিমানে নেপাল যাওয়া ফারুক হোসেন প্রিয়কের বন্ধু রফিকুল ইসলাম রাসেল। মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে এ খবর নিশ্চিত করেন। বাবা ও মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের পরিসমাপ্তি ঘটল।  তিনি আরও জানান, নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দুজনের লাশ শনাক্ত করা হয়। প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি, মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিছুদিন ধরে প্রিয়ংময়ী বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে সে-ও বিমানে চড়বে। মেয়ের শখ পূরণে প্রিয়ক বিমানে নেপাল বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মেয়ের সাধ পূরণ করেছেন প্রিয়ক। কিন্তু সে সাধ পূরণের পরিণতি হয়েছে বাবা ও মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কথাগুলো বলছিলেন নিহত প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম। একমাত্র সন্তান ও নাতনিকে হারিয়ে মাতম করছেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য হয় সেখানে। গতকাল প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা ফিরোজা বেগম ছেলে ও নাতনিকে হারানোর শোকে বিলাপ করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনজনের বেঁচে থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও প্রিয়ক ও তার তিন বছর বয়সী কন্যা প্রিয়ংময়ীর ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানতে স্বজন ও প্রতিবেশীরা সোমবার বিকাল থেকেই ভিড় করতে থাকেন প্রিয়কের বাড়িতে। কেউ এসে ফিরোজা বেগমকে দিতে থাকেন সান্ত্বনা, আবার কেউবা শোনান আশার বাণী ‘ফিরে আসবে ছেলে ও নাতনি’। নিহত প্রিয়কের মামা মশিউর রহমান নয়েছ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফারুকের সঙ্গে আমার ছেলে মাসুমও নেপাল যায়। কাঠমান্ডু থেকে মেহেদী জানিয়েছে, ফারুক ও তার মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মেহেদী জানায়, বিমানে ফারুকের কোলে ছিল তামাররা। যখন বিমান দুর্ঘটনার কবলিত হয়, তখন ফারুকের কোল থেকে তামাররা ছিটকে পড়ে যায়। মেয়েকে ধরতে গিয়ে ফারুকও ছিটকে পড়ে। তারপর থেকে ফারুক ও তামাররার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মেহেদী বিমানের দরজার কাছাকাছি থাকায় দ্রুত নামতে পেরেছে। প্রিয়ক পেশায় ফটোগ্রাফার। তার বাবা শরাফত আলী ৫ বছর আগে মারা যান। শরাফত-ফিরোজা পরিবারের একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ক। ছবি তোলার শখ ছোটবেলা থেকেই। রাজধানীর নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রিয়ক-এ্যানি দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল প্রিয়ংময়ী। এদিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঘটনার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের খোঁজ নিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ে নিহতদের মরদেহ দেশে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর