বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাকে ফোন দেওয়া হয়নি আলিফের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

‘কথা ছিল নেপাল থেকে ফিরে বিয়ে করবে আলিফ। বিয়েতে অনেক ধুমধাম হবে। মাকে বলেছিল, নেপাল পৌঁছেই আমি তোমাকে ফোন দেব। কিন্তু আকস্মিক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে গেল পুরো পরিবারের স্বপ্ন। মাকে আর ফোন দেওয়া হয়নি আলিফের। মাত্র পড়াশোনা শেষ হয়েছে। চার দিনের ভিসায় নেপাল গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে।’  অনেকটা ঘোরের মধ্যে একটানা কথাগুলো বলছিলেন কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত খুলনার আইচগাতির আলিফুজ্জামানের ছোট মামা আনিছুজ্জামান। বললেন, মায়ের খুব আদরের ছিল আলিফ। শখ ছিল মাকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর। যেখানেই যেত মায়ের জন্য কেনাকাটা করতে ভুলত না। যাওয়ার সময়ও মাকে বলেছিল, তোমার আর যেন কষ্ট না হয়, ফিরেই সেই ব্যবস্থা করছি। গতকাল নিহতের বাড়িতে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ। বিলাপ করছিলেন মা মনিকা পারভীন। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘আমার ছেলে আমার প্রাণ। কোনো কষ্ট করতে দিত না। সবসময় কাছে কাছে থাকত। বলেছিল মা, নেপাল গিয়েই তোমাকে ফোন করব। আর আমাকে ফোন দিতে পারেনি আমার ছেলে।’বিমানে ওঠার মুহূর্তে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলিফ। বিমানের ছবিসহ দেয় সর্বশেষ স্ট্যাটাস। তাতে লেখা ছিল, ‘বাই বাই খুলনা ... ওয়েলকাম ঢাকা।’ কয়েক দিন ধরে আলিফের বাড়িতে গিয়ে এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আলিফ মেজো। খুলনা বিএল কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছুটি থাকায় চার দিনের ভিসায় নেপাল গিয়েছিলেন সেখানে থাকা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে। এদিকে সন্তান হারানো কষ্ট মেনে নিতে পারছেন না বাবা মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান। সান্ত্বনা খুঁজছেন হয়তো এখনো বেঁচে আছে তার আদরের ধন। বললেন, সারাজীবনের পুণ্যের বিনিময়ে হয়তো আমার সন্তানকে ফিরে পাব। আলিফকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান পুরো পরিবার।

সর্বশেষ খবর