বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

উখিয়ার ঘাটে ঘাটে ত্রাণের হাট

মিলছে চাল ডাল তেল, লোটা-কম্বল থেকে প্রসাধনসামগ্রীও

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ত্রাণসামগ্রী এখন প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে। উখিয়ার প্রতিটি হাট-বাজারে মিলছে ত্রাণের পণ্য। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এখানকার বাজার ও ফুটপাথে। শুধু তা-ই নয়, মিলছে লোটা-কম্বল থেকে শুরু করে মশারি, ত্রিপল, সাবান, সুগন্ধি, তেল, শ্যাম্পু, ক্রিমের মতো প্রসাধনসামগ্রীও। উখিয়া ও টেকনাফের হাট-বাজার ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন ফুটপাথেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ। একটি অসাধু চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সস্তায় ত্রাণের পণ্য কিনে তা বেশি দামে বিক্রির কাজে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। চক্রের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী কিনে থাকে বলে জানা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গতকাল উখিয়ার কুতুপালংয়ের ৫ নম্বর ত্রাণ ক্যাম্পের কার্ডধারীদের মধ্যে সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতিটি পরিবারকে ২৭ কেজি চাল, ৯ কেজি বুটের ডাল ও তিন লিটার করে ভোজ্যতেল দেওয়া হয়। লাইন ধরে ত্রাণসামগ্রী হাতে পাওয়ার পর ২০ গজ দূরে গিয়েই রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম, আফাজ মিয়া ও দিলারা বেগম ১৪-১৫ বছরের এক কিশোরের কাছে চাল ও ডালগুলো বিক্রি করে দেন। ২৭ কেজি চাল ৭৫০ টাকা এবং ৯ কেজি বুটের ডাল মাত্র ১৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এভাবে প্রতিবার ত্রাণ দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে ত্রাণ কেনার অপেক্ষায় থাকে অসাধু চক্রটি। স্পটে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে একবার, এর চেয়ে বেশি সদস্য থাকলে তাদের জন্য মাসে দুবার করে খাদ্যপণ্য ত্রাণ হিসেবে দিয়ে থাকে। এর বাইরে আরও বিভিন্ন সংস্থা খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে থাকে নির্দিষ্ট মেয়াদে। এতে কেউ কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ত্রাণ বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত না হলেও প্রাপ্ত ত্রাণ বিক্রি করে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ক্যাম্পে গেলে ‘কোনো ত্রাণ পাইনি’ বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুনরায় ত্রাণ নেওয়ার কূটকৌশল করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, উখিয়ার মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া বাজার, কোটবাজার, উখিয়া সদর, কুতুপালং বাজার, বালুখালী পানবাজার, থাইংখালী বাজার, পালংখালী বাজার, টেকনাফের হ্নীলা বাজার, লেদাসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ। ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, আইওএম, ডব্লিউএইচওসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ছাপমারা কম্বল, ত্রিপলসহ চাল, ডাল, তেল, চিনি, শিশুদের দুধ, চিঁড়ার প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে এখানে।

 এসব ত্রাণসামগ্রী বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে রোহিঙ্গারা বিক্রি করে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। আর এই ব্যবসায়ীরা ক্যাম্প থেকে ত্রাণ কিনে এনে বিভিন্ন হাট-বাজারে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করছে। অবশ্যই তারাও বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করে থাকে। এদিকে রোহিঙ্গারা জানান, নগদ টাকার প্রয়োজনে তারা অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে থাকেন। যাদের সংসার ছোট তাদের এত বেশি ত্রাণের প্রয়োজন হয় না। প্রায় প্রতি সপ্তায় তারা কোনো না কোনো ত্রাণ পেয়ে থাকেন। তাই অনেকে সস্তায় তা বিক্রি করে দেন। গতকাল ক্যাম্পে ত্রাণ নেওয়ার পর ৯ কেজি ডাল ১৭০ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ডালগুলো খেতে মজা নেই। খাওয়া যায় না তাই বিক্রি করে দিয়েছি। কিছুদিন পর তো আবার পাবই।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগদ টাকার জন্য দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। সে টাকা দিয়ে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কিনতে গড়ে উঠেছে ক্যাম্পভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেট। তাদের কাজই হচ্ছে সস্তায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করা। আর বিক্রেতারা সহজেই ক্রেতা পাচ্ছে বিধায় এখানে এখন ত্রাণ কেনার জমজমাট ব্যবসা চলছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ‘আসলে শুরুর দিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছে সরকার ও দেশের সাধারণ মানুষ। এসব ত্রাণসামগ্রী রোহিঙ্গারা অন্যত্র বিক্রি করছে বলে শুনেছি। এখন অবশ্যই একটা নিয়মের মধ্যে আনা হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।’ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম দিকে যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণ হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় কেউ ত্রাণ পেয়েছে, আবার কেউ পায়নি। এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ বিতরণ হওয়ায় এ সমস্যা কেটে গেছে।’

সর্বশেষ খবর