বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেওয়া হবে সব ধরনের সহায়তা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এক জরুরি যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় দলীয় সংসদ সদস্য ও দলের নেতা-কর্মীদেরও বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। বিমান দুর্ঘটনার সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে সিঙ্গাপুর ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার পরই আমি সিঙ্গাপুর সফর বাতিল করে দেশে ফিরে আসি। আমার মনে হয়েছিল, এই সময় আমার দেশে থাকা প্রয়োজন। কারণ বহু বছর আমাদের দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশে ফিরে এসেই মিটিং করেছি। তিন বাহিনীর প্রধান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই মিটিংয়ে ছিলেন। এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছি। আগামী শুক্রবার সারা দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সভা করা হবে।’ বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নেপালে একটি মেডিকেল টিম এবং ডিএনএ সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানো হচ্ছে। কারণ আগুনে পোড়া কিছু লাশ ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা কঠিন। এ ছাড়া আমরা নেপালে খুব বেশি লোক পাঠাতে পারব না। কারণ তাদের ওপর চাপ পড়ে যাবে। তবে যা যা লাগবে তার সহায়তা আমরা দেব।’ বিমান দুর্ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আমি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার আমাদের দলের এমপি ও নেতাদের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের কী প্রয়োজন, কী সহায়তা করা যেতে পারে সে ব্যাপারে দেখা করে খোঁজ নিতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা, আমাদের দলের সিআরআইর ৫ নম্বর অফিসে কাজ করত একটা ছেলে, তার স্ত্রী ও বাচ্চা, সবাই মারা গেছে।’

আহতদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আহতদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকের অবস্থা এমন যে ওখান থেকে নিয়ে আসারও উপায় নেই। ইতিমধ্যে আমাদের বিমানমন্ত্রী নেপাল গেছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। করণীয় বিষয়ে আলোচনা করছেন তিনি।’

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরকে অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওটা খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ এয়ারপোর্ট। এর আগে ৭০ বার দুর্ঘটনা ঘটেছে ওখানে।’ তিনি বলেন, ‘নেপালের কিছু শিক্ষার্থী ছিল ওই বিমানে। তারা আমাদের দেশে মেডিকেল পড়ে ডাক্তার হতে এসেছিল। এমবিবিএস পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিল। আজকে তারাও নেই। ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল!’

গণভবনের ব্যায়কোয়েট হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে এইচ টি ইমাম, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, রাশিদুল আলম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, দেলোয়ার হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, ওমর ফারুক চৌধুরী, মোল্লা আবু কাওছার, অপু উকিল, সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্য বৈঠকের মতো এ বৈঠকে কোনো আড়ম্বর ছিল না। চেয়ার-টেবিল ছাড়াই কয়েকটি সোফা ও প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে বৈঠক করেন নেতারা। প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের বসে ছিলেন অন্য নেতাদের সমান্তরাল ছোট্ট একটি টেবিলসদৃশ মঞ্চে। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছিল।

জরুরি এ বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি গতকাল এয়ারপোর্টে নামার পরপরই আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদককে বলি, ঢাকায় যারা আছে তাদের সবাইকে নিয়ে আমি বসতে চাই। আমরা এখন শোক প্রস্তাব নেব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করণীয় এ ব্যাপারে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’ সবার নিরাপদ জীবন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেন।

সর্বশেষ খবর