রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সড়কপথই ইয়াবার নিরাপদ রুট

যানবাহনে পাচার হয় অভিনব কৌশলে, পণ্যবাহী ট্রাকেও চলে সরবরাহ

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

সড়কপথই ইয়াবার নিরাপদ রুট

জলপথ হয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়া ইয়াবার বড় চালানগুলো সড়কপথে বাধাহীনভাবে নির্বিঘ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ব্যক্তি শরীরে বা ব্যাগে ইয়াবার চালান বহন অনেকটা কঠিন ও অনিরাপদ। তাই ইয়াবা পাচারকারী ও কারবারিরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের মাধ্যমে ইয়াবার বড় চালানগুলো চট্টগ্রাম-ঢাকা শহরে পৌঁছে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইয়াবার ছোট চালানগুলো চেকপোস্ট বা প্রশাসনের তল্লাশিতে মাঝে-মধ্যে ধরা পড়লেও বড় চালানগুলো অধরা রয়ে যায়। এসব বড় চালান যানবাহনে মালিক, চালক ও পাচারকারীর সমন্বিত চুক্তিতে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সেসব চালান ধরা পড়ে না বা ধরার কোনো সুযোগ থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমান্ত শহর টেকনাফ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যানবাহনগুলোর মধ্যে বেশকিছু যানবাহন ইয়াবা পাচারে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। এসব যানবাহন পরিবহন ব্যবসার আড়ালে মালিকের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে বড় অঙ্কের অর্থ চুক্তির মাধ্যমে ইয়াবার চালান বহন করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইয়াবা পাচারে চালকরা গাড়িতে বিশেষ জোগান করে রাখে অথবা প্রয়োজনে গাড়ির কোনো একটি যন্ত্রাংশ খুলে সেখানে ইয়াবা ভর্তি করে পুনরায় ওয়েল্ডিং করে দিয়ে বোঝার কোনো চিহ্ন না রেখেই নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে ইয়াবার পাইকারি ক্রেতার হাতে হস্তান্তর করে। এসব যানবাহনে এমন কৌশলে ইয়াবা বহন করা হয় যা প্রশাসনের ধরাছোঁয়ারও বাইরে।

সড়কপথে ইয়াবা পরিবহনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় যাতায়াতকারী প্রাইভেটকার, নোয়া গাড়ি এবং স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাকেই সবচেয়ে বেশি ইয়াবা পাচার হয় বলেও জানা যায়। সীমান্ত শহরের অনেক সচেতন ব্যক্তি এখন চট্টগ্রাম-ঢাকা যাতায়াতে বিশেষ করে কার, নোয়া গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করতে খুবই দ্বিধায় পড়ে যান। কেননা এসব যানবাহনের কোনো কোনো চালক চট্টগ্রাম-ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ভাড়া হলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গিয়ে ইয়াবা ভরে নিয়ে ভাড়ার লোকদের নিয়ে যাত্রা করে। সেক্ষেত্রে  কখনো চালান আটক হলে নিরপরাধ যাত্রীদের ইয়াবায় ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এজন্য টেকনাফের সচেতন ব্যক্তিদের এ পথে গাড়ি ভাড়া করতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। অন্যদিকে স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাকে করে ইয়াবা বহন আরও বেশি নিরাপদ কারবারিদের কাছে। ট্রাকে মালামালের স্তূপের কোনো এক কোনায় বা গাড়ির কোনো অংশে ইয়াবা বহন করলে গোপন সংবাদ না পাওয়া ছাড়া ইয়াবার সে চালান উদ্ধার করা একেবারেই অসম্ভব। টেকনাফের একাধিক ট্রাক মালিকের সঙ্গে আলাপকালে নিজেরা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রয়েছেন দাবি করলেও ট্রাকেই যে নানান কৌশলে ইয়াবার চালান পাচার হয় সে কথা স্বীকার করেছেন তারা। তারা আরও জানান, স্থলবন্দরের মালামাল বহনকারী গাড়িগুলো সাধারণত রাস্তার কোথাও থামানো হয় না, এ ছাড়া থামিয়ে এসব গাড়ির এত বিপুল পরিমাণ মালামাল সরিয়ে ইয়াবা খোঁজাও প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব। কোথাও গাড়ি আটকানো হলেও বন্দরের মালামাল পরিবহনের প্রমাণাদি প্রদর্শন করে ছাড় পাওয়া যায়। সেজন্য অন্যান্য যে কোনো যানবাহনের চেয়ে ট্রাকেই সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা ইয়াবা কারবারিদের। অভিযোগ রয়েছে, মালিকদের না জানিয়ে অনেক চালক গোপনে অহরহ ইয়াবার চালান বহন করেন। এ বিষয়ে সংযুক্তদের সঙ্গে কৌশলে কথা বলে আরও জানা যায়, ইয়াবা বহনকারী যানবাহনগুলো টেকনাফ থেকে প্রতিটি ইয়াবা ট্যাবলেট ঢাকা শহরে পৌঁছে দিতে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা করে নিয়ে থাকে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির চালক থেকে ইয়াবা পাচারে সম্পৃক্ত হয়ে অনেকেই লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন টেকনাফে। একসময়ের অনেক গাড়ি চালকও এখন নিজস্ব বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। অন্যদিকে সড়কপথে ইয়াবার বড় চালান পাচারে পর্যটকবাহী বাস এবং রোগী বহনকারী গাড়িগুলো আরও নিরাপদে ব্যবহার করে ইয়াবা কারবারিরা। তবে কোনো ক্ষেত্রে গাড়ির চালকের অগোচরে নয়, যানবাহনে করে ইয়াবার যত চালান পাচার হয় তার সবটুকুই চালক ও হেলপারের সঙ্গে চুক্তি করে হয়ে থাকে বলে জানা যায়।স্থানীয়দের মতে, ইয়াবার বড় চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পাচারের সুযোগ থাকায় মিয়ানমার থেকে বেশি পরিমাণে ইয়াবা এ দেশে ঢুকছে। এক্ষেত্রে টেকনাফ-কক্সবাজার, টেকনাফ-চট্টগ্রাম-ঢাকা চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা অসহযোগিতা করলে বা তারা ইয়াবার চালান বহন করতে অপারগতা দেখালে তখন ব্যক্তি শরীরে বা ব্যাগে করে ইয়াবা বহন করা পাচারকারীদের কাছে কঠিন হয়ে যাবে এবং তাতে পাচারে সমস্যা বা বাধা থাকলে ইয়াবার এত চালান দেশে ঢুকত না।

সর্বশেষ খবর