মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

রংপুরের ছয়টি আসনেই লড়াই আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

রংপুরের ছয়টি আসনেই লড়াই আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রংপুরের ছয়টি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন তারা। নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রধানের ছবিসহ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছবিসংবলিত ডিজিটাল বিলবোর্ড ও রঙিন শুভেচ্ছা পোস্টারও দেখা গেছে। কার্যত রংপুরের ছয়টি আসনেই ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পর থেকে এ ছয়টি আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেননি। শুধু রংপুর-৪ আসনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও অন্যগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেনি। ফলে সবকটি আসনেই জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামী লীগ ও জাপার নেতা-কর্মীরা। এ ছয়টি আসনের মধ্যে একটিতে এমপি হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরেকটিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে স্থানীয় নেতারা নিশ্চিত করেছেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে সামান্য ভোটে পরাজিত হলেও নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি পরপর এমপি হন। তখন থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নূর মোহাম্মদ মণ্ডলের কাছেই পরাজিত হন শেখ হাসিনা। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হয়ে শেখ হাসিনার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। বর্তমানে এ আসনে জাতীয় পর্টির প্রার্থী হিসেবে নূরে আলম যাদু দলীয় চেয়ারম্যানের সবুজ সংকেত পেয়ে অনেক দিন আগেই মাঠে নেমেছেন। প্রার্থী হবেন উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা বেলাল হোসাইনও। রংপুর-৩ আসনে এবারও প্রার্থী হবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তার ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আগামী নির্বাচনে এ আসনেই লড়বেন এরশাদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, মহানগর বিএনপি সভাপতি মোজাফফর হোসেন এবং মহানগরের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম মণ্ডল। নবম সংসদ নির্বাচনে আবদুল কাইয়ুম মণ্ডল চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারান। অন্যান্য দলের মধ্যে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা সভাপতি একরামুল হোসেন স্বপন, মহানগর জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, বাসদের জেলা সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস, মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আমিরুজ্জামান পিয়াল, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব রেয়াজ উদ্দিন। রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দুবারের এমপি টিপু মুন্শী এবারও মনোনয়ন চাইবেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সেখানে টিপু মুন্শীর বিকল্প কাউকে দেখছেন না। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দুজন। তারা হলেন যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবুর রহমান। ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাঙা ও জেলা বিএনপির সদস্য কর্নেল আবদুল বাতেন (অব.)। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি মো. বদিউজ্জামান এবং জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য রফিকুল ইসলাম প্রার্থী হবেন। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনবার এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে ছেলে রাশেক রহমানের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আশিকুর রহমানের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন-দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মোতাহার হোসেন মওলা ও জাকির হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি শিল্পপতি এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর এবারও মনোনয়ন চাইবেন। জোটের কারণে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি তিনি। জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খাজা নূর খাজা ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে জামায়াত অধ্যুষিত মিঠাপুকুরে উপজেলা জামায়াতের আমির ও বরখাস্ত হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা সহসভাপতি শফিউল আলম ভোলা মণ্ডল এবং নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাবও প্রার্থী হবেন। রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে ষষ্ঠ থেকে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় কোনো নেতা প্রার্থী হতে পারেননি। রংপুর-৩ ও ৪ আসনের নেতারা প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি মশিউর রহমান রাঙা ও সাবেক এমপি জেলা জাপার সাবেক আহ্বায়ক হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও যুগ্মসম্পাদক মোকাররম হোসেন সুজন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা সভাপতি মাওলানা মোখতার হোসেন এবং রংপুর জেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক খায়রুল আলম বাবুর নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, তার চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরী এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। ডিউক চৌধুরী ও টুটুল চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিচ্ছেন বিশ্বনাথ সরকার বিটু। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন পার্টির জেলা সদস্য মোকাম্মেল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। বিএনপির উপজেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি পরিতোষ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শাহান, বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কমল লোহানী এবং জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) আবদুস সাত্তার, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী এবং জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য জয়চন্দ্র প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর