বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

শুরু হচ্ছে কর্ণফুলী টানেলের মূল কাজ

চীন থেকে আসছে বোরিং মেশিন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

শুরু হচ্ছে কর্ণফুলী টানেলের মূল কাজ

স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের মূল খননকাজ আগামী জুনে শুরু হতে যাচ্ছে। নদীগর্ভে খননের মূল যন্ত্র ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম) মে নাগাদ চীন থেকে চট্টগ্রামে আসছে। টিবিএম প্রায় প্রস্তুত। এই মেশিনের ছোট ছোট অংশ দেশে এনে পরে সংযোজন করা হবে। নদীগর্ভে টিবিএম নামানোর জন্য টানেলমুখের দুই প্রান্তে জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের প্রথম এই টানেলটি হবে ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপের। টানেল নির্মাণ করা হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে। ২০১৬ সালেল ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণ কাজের যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিন পিং।

‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণে আনোয়ারা এলাকায়। ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (সম্ভাব্য) ব্যয়ের এই টানেলের অ্যালাইনমেন্ট হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে। বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানাসংলগ্ন ঘাট। মোট ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটির মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৫ মিটার (উভয় পাশের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট বাদ দিয়ে)। টানেলে থাকবে ৯২০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে শহর প্রান্তের ‘এট গ্রেড সেকশন’ হবে ৪৬০ মিটারের আর দক্ষিণ প্রান্তের ‘এট গ্রেড সেকশন’ হবে ৪ হাজার ৪০৩ দশমিক ৯৭১ মিটারের। সরেজমিন দেখা যায়, চারটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে চলছে ড্রেজিংয়ের কাজ। শেষ হয়েছে ডিএপি সার কারখানা ও কাফকোর মাঝামাঝি মাঝের চর এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস, আবাসস্থল ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য মাটি ভরাটের কাজ। একইভাবে নদীর উত্তর পাড়ে পতেঙ্গায় নির্মাণ সরঞ্জাম রাখা ও আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণে চীন থেকে এসেছে দুই জাহাজ উপকরণ। কর্ণফুলী টানেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ড. অনুপম সাহা বলেন, ‘টানেল নির্মাণ বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ। টানেলের অতি জরুরি উপকরণ হচ্ছে “টানেল বোরিং মেশিন”। যেটি আগামী মে মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছার কথা। নদীতে বোরিং শুরুর আগে অনেক ধাপ পার হতে হয়। সেগুলো এখন শেষ পর্যায়ে।’ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঋণচুক্তি অনুযায়ী চায়না এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১৪১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা) পাওয়া গেছে। গত ৭ ডিসেম্বর এ অর্থ ছাড় করে ব্যাংকটি।

ডিসেম্বরেই ‘মোবিলাইজেশন মানি’ হিসেবে এ টাকা ঠিকাদারি সংস্থা চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে (সিসিসিসি) বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল ছাড়াও পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগসড়ক নির্মাণ করা হবে। এ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭০ কোটি ৫৯ ডলার বা ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা চীন ঋণ দেওয়ার কথা। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। এ বাবদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) এ প্রকল্পে ১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিম তুলাতলি মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানের ৪ দাগে ১৯ দশমিক ৩৫৫৯ একর এবং ৮ দাগে ৬৬ দশমিক ৫৩৩২ একরসহ মোট ৮৫ দশমিক ৮৯০১ একর বালুচর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পতেঙ্গা এলাকার ৭০ দশমিক ৩৩ একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর