বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেখানে- সেখানে যাত্রী ওঠা নামা করানো যাবে না

যানজট নিরসনে আসছে নানা উদ্যোগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রাজধানীর যানজট নিরসনে বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যানবাহনকে দ্রুত লেন পরিবর্তন করতে দেওয়া হবে না। ডাইভারসন অহেতুক চওড়া করা হবে না। রাস্তার মাঝখানে আর পুলিশ বক্স নয় এবং যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা হবে। ট্রাফিক পুলিশের একটি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং দল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানজট নিরসনে এসব উদ্যোগ নেবে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে  এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সরকারি সূত্রগুলো জানায়, যানজট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে রাজধানীতে বৃত্তাকার নৌ-পথ সচল করার পাশাপাশি ট্রাফিক সিগন্যালের বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানের জন্য প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠন এবং এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে একটি এভিএনপিআর ক্যামেরা প্রস্তুতের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। কার্যবিবরণীতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের মন্তব্য তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, নদীপথের ওপর গুরুত্ব আরোপের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতালির রোমে ইফাদ সম্মেলনে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নদীপথকে সচল করে যানজট নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণসহ বৃত্তাকার নৌপথ সচল করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।  বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ অনেকেই আছে। যানজট নিরসন সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পুলিশ বিভাগে ন্যস্ত করার সুপারিশ জানান তিনি। এ ছাড়া বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যে দায়িত্ব নিয়েছিল, সেটি ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে দেওয়ার বিষয়েও মতামত দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজধানীর ৫২টি স্থানে স্ট্রিট পার্কিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি চালু হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, ফকিরাপুল-ঝিলমিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শিগগিরই টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ডিটিসিএর প্রতিনিধি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এ কাজটি করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রমসহ সব তথ্য সরবরাহ করে উত্তর সিটি করপোরেশন সহায়তা করতে পারে। ট্রাফিক বিভাগ জানায়, দশ তলা কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ডিএমপির অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ট্রাফিক সিগন্যালের বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানের জন্য এটুআই একটি চ্যালেঞ্জ ফান্ড ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারে। এ কার্যক্রমের সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বিআরটিএ ও ডিটিসিএকে পার্টনার হিসেবে রাখা যেতে পারে।

বুয়েটের উপাচার্য জানান, রাজধানীতে চলাচলরত বাস দ্রুত লেন পরিবর্তন করে রাস্তার মাঝখানে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছে। কোনো শৃঙ্খলা মানছে না। ফুটপাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে হাঁটা-চলা করা যাচ্ছে না। ডাইভারশন অহেতুক চওড়া এবং রাস্তার মাঝখানে পুলিশ বক্স করা হচ্ছে। রাস্তার ক্রসিং পয়েন্টে অটো সিগন্যালিং ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আর যেখানে সেখানে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ঢাকা সিটিতে যে যানজট সৃষ্টি হয় তাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুই ধরনের ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, উচ্চপ্রবৃদ্ধি এবং শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সামনের দিনগুলোতে ঢাকা সিটির ট্রাফিকজট পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

সর্বশেষ খবর