বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নিয়ে দুই চিন্তা দুই দলে

বিএনপিকে আদালতে ব্যস্ত রেখেই সিটিতে জয় চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপিকে আদালতে ব্যস্ত রেখেই সিটিতে জয় চায় আওয়ামী লীগ

বিএনপিকে আদালতে ব্যস্ত রেখেই সিটি নির্বাচনে জয় চায় আওয়ামী লীগ। রংপুর সিটি নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল সিটিতে এগোবে ক্ষমতাসীন দলটি। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে সব ধরনের পদক্ষেপে সতর্কভাবে পা বাড়াবে দলটির নীতিনির্ধারকরা। ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে জয় নিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে দেবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য সিটিগুলোতে নির্বাচনী জনসভা করছেন  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্রমতে, নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় জেলে রয়েছেন। জেল থেকে বের হতে আরও সময় লাগতে পারে। আগামী ৮ মে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের শীর্ষ নেতার জামিন নিয়ে বিএনপির নেতারা আদালতে দৌড়াবেন। দলের শীর্ষ নেতার জেল হওয়ায় বিএনপি এখন রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন স্লোগান দেবে। একদিকে বিএনপির দুর্নীতি, অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন-প্রচারণা সামনে আনবে সরকারি দল। সে কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই জয়লাভ করবেন বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা। সিটি নির্বাচনে কী ফলাফল হয়, সে অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কৌশল ঠিক করা হবে। তবে আসন্ন সিটি নির্বাচনগুলোয় দলীয় মেয়র প্রার্থীদের জেতা যেমন জরুরি, তেমনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখাও অপরিহার্য। একদিকে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা, অন্যদিকে বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট রাখা। দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে আগেই রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৩১ মার্চ তফসিল ঘোষণা করা হবে। এবার দুই ধাপে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। দুই দফায় সিটি নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনরাই বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

গত বছর ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। সরকারের এত উন্নয়নের পরও রংপুরে কেন পরাজয় এর কারণ খুঁজছে দলের নীতিনির্ধারকরা। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশনে পরাজয়ের সংখ্যা বাড়লে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা পাবে, যা জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। সে জন্য যথেষ্ট সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে সামনে এগোনোর কথা ভাবছেন তারা। এ জন্য তৃণমূল সংগঠনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংগঠনের ভুল থাকলে তাও পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে। এ জন্য রংপুর সিটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে ভোট করতে চায় আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনায় জনসভা করে এসেছেন। আগামী ৫ এপ্রিল গাজীপুরে তিনি জনসভা করবেন। সেখানে নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় কিছু ইকুয়েশন থাকে। তা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে খুলনায় জনসভা করেছেন। আগামী ৫ এপ্রিল গাজীপুর ও ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ভাবছি না। জেলা সফরের মাধ্যমে আমরা সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা পাঁচ সিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অটুট আছে তা আবারও জানান দিতে চাই।’

সর্বশেষ খবর