বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নিয়ে দুই চিন্তা দুই দলে

জয়ের ধারায় থেকেই খালেদার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

জয়ের ধারায় থেকেই খালেদার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করবে বিএনপি

স্থানীয় সরকার নিয়ে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে, সব নির্বাচনেই অংশ নেওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়া অন্তরায় হবে না বলেও মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা। তাদের মতে, বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার আগেও সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানেই ছিলেন। আর সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলে বেগম  খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরও বেগবান হবে। তবে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও অনুকূল পরিবেশের ওপর নজর রাখছে দলটি। মোটামুটিভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে নির্বাচন করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হলে আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা ভেবে দেখা হবে। এই নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে আরও পোক্ত করা। সুতরাং জনগণের এ ধরনের নির্বাচনের প্রতি খুব একটা সমর্থন থাকবে না।’ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা অতীতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছি। এখন বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে। তাই পরিবর্তিত পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করবে।’ জানা যায়, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে ৩১ মার্চ। সে অনুযায়ী মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ঈদুল ফিতরের পর সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির আগের প্রার্থীই অর্থাৎ বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানের প্রার্থী হওয়া অনেকটা চূড়ান্ত। তিনি এলাকায় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। খুলনায় প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেখানে বর্তমান মেয়র মনিরুল ইসলাম মনি। এবার সেখানে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে থাকা খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। কেন্দ্রে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিনিয়র নেতা জানান, শফিকুল আলম মনারই প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

বিএনপি সূত্র জানায়, রাজশাহীতেও বর্তমান মেয়র  মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নির্বাচনী গণসংযোগও করছেন। একইভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনেও বিএনপির আগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আরিফুল হকই নির্বাচনী মাঠে। দলের হাইকমান্ড থেকেও সবুজ সংকেত পেয়েছেন তিনি। সেখানে ইলিয়াসপন্থি নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণে দলের মনোয়ন পেতে তার বেগ পেতে হবে না। এদিকে, বরিশাল সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেখানে বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া তিনি অসুখ বিসুখসহ নানা কারণে ঢাকাই থাকেন বেশি। সেক্ষেত্রে সেখানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারকেই বেছে নিতে পারে বিএনপি। স্থানীয়ভাবেও তার সর্বস্তরে একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কোনো কারণে মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচন না করলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানও প্রার্থী হতে পারেন। অবশ্য বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালও ফের প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। মজিবর রহমান সরোয়ার অবশ্য জানান, মেয়র নির্বাচন করার ইচ্ছা তার নেই। তবে বিএনপির হাইকমান্ড যদি তাকে নির্বাচন করতে বলে সেক্ষেত্রে তিনি বিবেচনা করবেন। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনকে ইস্যু হিসেবেও ব্যবহার করতে চায় বিএনপি। দল মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলে সরকারের জনপ্রিয়তায় ছেদ পড়েছে বলে প্রচার করা যাবে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরও ত্বরান্বিত হবে। আবার হেরে গেলে কারচুপির অভিযোগ তুলে সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা দাবি আদায়ের সুযোগ মিলবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, সিটি নির্বাচনে আমরা যেতে চাই। তবে আমরা দেখব, নির্বাচন কমিশন আর স্থানীয় প্রশাসন কতটুকু নিরপেক্ষ। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ আছে কি না। আমাদের প্রার্থীর কোনো সমস্যা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি পাঁচটি সিটিতেই জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।

সর্বশেষ খবর