বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সন্দেহের তীরে চারজন

রাজধানীতে দুই গারো নারী হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্দেহের তীরে চারজন

রাজধানীর গুলশানে গারো সম্প্রদায়ের বেসেথ চিরান ও তার মেয়ে সুজাতা চিরান হত্যার পেছনে চারজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে সুজাতার ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে সন্দেহ করা হচ্ছে। হত্যার দিন মঙ্গলবার বিকালে সঞ্জীব তার তিন বন্ধুসহ কালাচাঁদপুরের ক-২৫ নম্বর বাড়ির চার তলার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। প্রবেশের দুই ঘণ্টা পর তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সুজাতার মেয়েজামাই পিলেস্তার ওই বাসায় গিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ দেখতে পান। দরজা খুলেই দেখেন ঘরে লাশ পড়ে আছে। গতকাল এ ঘটনায় সুজাতার স্বামী আশিস মানখিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এসব  বিষয় নিশ্চিত করেছেন। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে ধারণা করছি। বাড়ির নিচ তলায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিকাল ৪টার দিকে সুজাতার বোনের ছেলে সঞ্জীব তিন ব্যক্তিসহ বাসায় এসেছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা বেরিয়ে যান। এরপর সুজাতার বড় মেয়ে মায়াবীর স্বামী পিলেস্তার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাসায় আসেন। সে সময় তিনি দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে ভিতরে ঢুকে তিনি সুজাতা ও তার মা বেসেথ চিরানের লাশ দেখতে পান। সুজাতার স্বামী আশিস মানখিন বলেন, সুজাতার বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব। বেকার সঞ্জীব সুজাতার কাছ থেকে টাকাপয়সা দাবি করছিল। এটা থেকেই হয়তো সঞ্জীব এই খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ সমাহিত করার জন্য ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার জয়রামপুর চন্দ্রাঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সুজাতা চিরানের মেয়ে মায়াবী চিরান বলেন, ‘আমার মা ও নানীর খুনি যারাই হোক, তাদের গ্রেফতার করা হোক। আমরা ধারণা করছি, এই খুনের পেছনে আমার বড় খালার ছেলে সঞ্জীব জড়িত থাকতে পারে।’ এদিকে, মা-মেয়ের লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, বেসেথ চিরানকে শ্বাসরোধে ও সুজাতাকে এলোপাতারি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুজাতার বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরে ১৪টি কাটা জখম রয়েছে। গলায় রয়েছে গভীর ক্ষতচিহ্ন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সুজাতার মৃত্যু হয়েছে। হত্যার ধরন দেখে মনে হয়েছে বেশ কয়েকজন ছিল। নিহতদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ব্লাড ও অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানতেও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জীবের বাবা-মা ময়মনসিংহের ভালুকায় থাকেন। মাদকাসক্ত সঞ্জীব অল্প বয়সেই বিয়ে করে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগরে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। চিকিৎসার কথা বলে কালাচাঁদপুরের ওই বাসায় এসেছিলেন। নানী বেসেথ চিরানের কাছে টাকা না পেয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। বিষয়টি দেখে ফেলায় খালা সুজাতা চিরানকেও কুপিয়ে হত্যা করেন।

পুলিশের গুলশান জোনের এসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। নিকটাত্মীয় দ্বারা এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা গ্রেফতারের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানার উত্তর কালাচাঁদপুরের ক-২৫ নম্বর বাড়ির চার তলার ফ্ল্যাট থেকে বেসেথ চিরান (৬৫) ও সুজাতা চিরানের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুজাতার গলা কাটা ও বেসেথের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর