বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

মোটরসাইকেল ব্যবহার ও দুর্ঘটনা বাড়ছে

নিজামুল হক বিপুল

রাইড শেয়ারিংয়ের নামে ঢাকার রাস্তায় বাড়ছে মোটরসাইকেলে যাত্রী সার্ভিস। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা ও আর্থিক ক্ষতি। নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে এটি মোটেই নগরীর সমস্যার সমাধান করবে না। রাইড শেয়ারিংয়ের নামে যে সার্ভিস মোটরসাইকেলে চালু হয়েছে তা ভবিষ্যতে বিরাট সমস্যা ও ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে ঢাকার রাস্তায়। তা ছাড়া এটি ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আরএসটিপির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মোটরসাইকেল সমাধান মনে হতে পারে; তবে সামনে এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি এখন হচ্ছে ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোটরসাইকেলবহুল শহরগুলো। ওখানে হাজার হাজার মোটরসাইকেল এবং তার দূষণ, মোটরসাইকেলের এদিক-সেদিক বিপজ্জনক চলাচলের কারণে ওই দেশগুলোয় মোটরসাইকেলকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক মনে করেন, মোটরসাইকেলকে কখনো উৎসাহিত করা উচিত নয়। এটা অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বাহন। এ রকম সার্ভিসে কেউ একবার আসক্ত হয়ে গেলে সেই আসক্তি থেকে বের হওয়া কঠিন। সরকারকে এ নিয়ে ভাবতে হবে।

এদিকে সরকার যে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা করে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে তাতে মোটরসাইকেলের মতো সার্ভিস বিস্তৃত হলে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। সরকার যখন এ নিয়ে নীতিমালা করেছে তখন নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কোনো বৈঠকে বসেনি বা তাদের পরামর্শও নেয়নি। নীতিমালা তৈরির দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ সরকারি সংস্থাগুলোর বাইরে আর কারও সঙ্গে এক দিনও বসেনি।

এই নীতিমালার বিষয়ে নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং বলতে যা বোঝায় তা আমাদের এখানে চালু হয়নি। ট্যাক্সি সার্ভিসের মতো একটা হয়েছে। চারজন যাত্রী একসঙ্গে যাওয়ার ভালো সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম রাইড শেয়ারিং হচ্ছে না। রাইড শেয়ারের পূর্বশর্ত হলো মানুষের মধ্যে এর প্রচলন শুরু হওয়া। এখন আমাদের দেশে এর ‘রিটেইল ফরমেট’ চলছে। এখনো ভিত্তি পর্যায়ে রয়েছে। মানুষ অ্যাপভিত্তিক কালচারের সঙ্গে মিশছে। এরপর হয়তো রাইড শেয়ার হবে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় যেভাবে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং হচ্ছে এতে হিতে বিপরীত হবে। চার চাকার গাড়ির চেয়ে মোটরসাইকেল অন্তত ৩০ ভাগ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু গাড়ির ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং হলে তার সম্ভাবনা ভালো। তবে রাইড শেয়ারিংয়ের নামে এখন যেভাবে ট্যাক্সি সার্ভিসের মতো এর ব্যবহার হচ্ছে তা উদ্বেগের। এদিকে ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকার রাস্তায় প্রথম অ্যাপনির্ভর পরিবহন সার্ভিস মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং শুরু করে স্যাম। মোটরসাইকেলের এ রকম ঝুঁকির কথা বিবেচনায় না নিয়ে কেন এ ধরনের সার্ভিস শুরু করেছিলেন— জানতে চাইলে স্যাম অ্যাপ প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ কাসেম বলেন, ‘আমরা বিআরটিএর কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম তাতে স্পষ্ট লেখা ছিল— এটা কেউ পেশা হিসেবে নিয়ে রাস্তায় নামতে পারবে না। মোটরসাইকেলের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি যেন কোনোভাবেই ৭ থেকে ৮ টাকার বেশি না হয়। ভাড়া বাড়িয়ে দিলে নতুন মোটরসাইকেল নেমে অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে দিনভর চালাবে, যা এখন হচ্ছে। আমরা ট্যাক্সি সার্ভিস নয়, চেয়েছিলাম প্রকৃত রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করতে; যাতে পরবর্তীতে বিআরটিএ তাদের নীতিমালায় একে রাইড শেয়ারিং হিসেবেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারত। কিন্তু তা হয়নি।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজধানীর রাস্তায় উবার, স্যাম, পাঠাওসহ অন্তত ১৫টি অ্যাপভিতিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ট্যাক্সি সার্ভিস চলছে। আর মোটরসাইকেলে দিনে ১০ হাজারের বেশি রাইড হচ্ছে। এর মধ্যে পাঠাও অ্যাপে মোটরসাইকেলে রাইড সংখ্যা বেশি হয়। তবে পাঠাও অ্যাপ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নয়।

সর্বশেষ খবর