শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির নানা পরিকল্পনা

গোলাম রাব্বানী

ডিজিটাল হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল’ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা, ভোট ব্যবস্থাপনার সবকিছু ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া চলছে। সেই সঙ্গে ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশেরও চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১১ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ৪২ হাজার ট্যাব কেনার প্রস্তাব করেছে ইসি সচিবালয়। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ডিজিটাল করতে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমাইজড ট্যাব প্রতিটি কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে। এ ট্যাব নির্বাচনকালীন এবং পরেও অনেক কাজে লাগবে। অনলাইনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল, প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগ, এসএমএসের মাধ্যমে কেন্দ্রের তথ্য প্রেরণ, দ্রুত কেন্দ্রের ফলাফল প্রেরণ, ভোট চলাকালীন ভিডিও ধারণ, সরাসরি ইসিকে দেখানো, ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহ, বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন, মৃত ভোটার ব্যবস্থাপনাসহ নির্বাচনসংক্রান্ত সব কাজ ডিজিটাল করার পরিকল্পনা নিয়ে এ ট্যাব কেনা হচ্ছে। জানা গেছে, ভোটের তথ্য ও ফল দ্রুত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে একটি ট্যাব (ট্যাবলেট কম্পিউটার) দেওয়া হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। সোমবার কমিশন সভায় এসব ট্যাব কেনার অনুমোদন চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনারও অনুমোদন চাওয়া হয়। প্রতিটি ইভিএমের সম্ভাব্য দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকার বেশি। তবে সভায় ইভিএম ও ট্যাব কেনার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্বাচনে ১১ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা ও প্রস্তাব কমিশনে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কার্যক্রমের যেসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব হবে সেগুলো হচ্ছে— অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচন কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষক ব্যবস্থাপনা, ভোট গ্রহণ মনিটরিং ও ঝুঁকি পর্যালোচনা, কেন্দ্রভিত্তিক ফল সংগ্রহ ও ফলাফল ব্যবস্থাপনা এবং ভোট কেন্দ্র এলাকা ও ফলাফলে জিআইএসের ব্যবহার। প্রযুক্তির ব্যবহারের অংশ হিসেবে ট্যাব কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে ১৭ ধরনের হার্ডওয়্যার কিনতে সম্ভাব্য ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ট্যাব কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। আর ৫ ধরনের সফটওয়্যার কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন ও অফিস ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ট্যাবগুলো বিশেষায়িত থাকবে। নির্বাচন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার সফটওয়্যার ওই ট্যাবে ইনস্টল থাকবে। এসব ট্যাবে সাধারণ কাজ করা যাবে না। এগুলো পাইলটিং করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আংশিক ইভিএম ব্যবহারের প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। তবে এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করে বলতে চাইছে না কমিশন। কিন্তু কমিশন ভোটিং পদ্ধতি ডিজিটাল করার পাশাপাশি ভোট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে বেশকিছু কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করার সুযোগ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোটের ফলাফল সংগ্রহ এবং প্রচার, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং, নির্বাচনী অভিযোগ অনলাইনে নেওয়া, এসএমএসের মাধ্যমে ভোটারদের নানা তথ্য-উপাত্ত প্রদানের চিন্তা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় তদারকি করার আলাদা কমিটি করা হবে। ভোটের অভিযোগ নেওয়ার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার ও এসএমএসে অভিযোগ সংগ্রহ করবে ইসি সচিবালয়। সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। অন্যদিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোটের ফলাফল সংগ্রহ করে তা প্রচার করা হবে ডিজিটালভাবেই। এ ছাড়া ফলাফল সংগ্রহের পরপরই তা যেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যায় এজন্য সফটওয়্যারে সেই ব্যবস্থাও রাখা হবে।

সর্বশেষ খবর