শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

আলু চাষির মুখে হাসি নেই

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

আলু চাষির মুখে হাসি নেই

লাভের আশায় আলু আবাদ করে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছে রংপুরের কৃষকরা। উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না। পাঁচ-ছয় টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আলু। এ দামেও কেনার লোক নেই। ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসল অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। অথচ এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে আট টাকা। এক কেজি চাল কিনতে কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ থেকে ৯ কেজি আলু। রংপুর সদর, পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর এক একর জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছিল ১৬ হাজার টাকা। এবার তা বেড়ে ২০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এসব এলাকায় কার্ডিনাল জাতের প্রতি বস্তা আলু ৬০০ টাকা, গ্রানুলা ৫০০ টাকা এবং ডায়ম্ল ৫৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের বড়হাজরা গ্রামের আলু চাষি আব্দুল গফুর এবার ৪ একর জমিতে কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেছেন। তার আলু উঠেছে ৮৪ কেজি ওজনের ৪৮০ বস্তা। খরচ হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ৫ টাকা কেজি দরে ৪৮০ বস্তা আলু বিক্রি করে তিনি ২ লাখ ১ হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছেন। লোকসান গুণতে হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ টাকা।

সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজুল্লাহ গ্রামের মোজাফফর হোসেন জানান, ‘আড়াই একর জমিতে গ্রানুলা আলু চাষ করি ৩০০ বস্তা আলু পাইচি। ৫-৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাইলে মোটা দাগের লোকসান হইবে। যে কারণে আলু বেচাই নাই’। মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের চুহড় এলাকার আলু চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলু বীজ, কীটনাশক ও কিষাণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এবছর জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ রোপণ এবং আলু ঘরে তোলা পর্যন্ত একরে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। একদিকে দাম কম অন্যদিকে ক্রেতা না থাকায় আলু বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।  আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, মওসুমের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন জেলায় রংপুরের আলুর চাহিদা ছিল। প্রচুর পরিমাণে বিক্রিও হতো। তখন জাত ভেদে প্রতি বস্তা ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে বাইরের জেলায় আলু বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী যারা আলু কিনে হিমাগারে মজুদ রাখেন তারাও এখন পর্যন্ত আলু কেনা শুরু করেননি। ফলে সরবরাহ অনুযায়ী ক্রেতা না থাকায় দাম পড়ে গেছে বলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।  রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার আলুর আড়তদার খোকন মিয়া বলেন, সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা নেই। বাইরের জেলায় আলু যাওয়া বন্ধ। ফলে বাজার পড়ে গেছে। বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সদস্য মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর রয়েছে ১০টি হিমাগার। তিনি বলেন, গত বছর হিমাগারে আলু রেখে মোটা দাগে লোকসান গুণেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এ কারণে এ বছর যে দামেই হোক ক্ষেত থেকে বিক্রির প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কৃষকদের আলুর ন্যায্য দাম দিতে এ মুহূর্তে বাজার থেকে ফাস্টফুড ও চিপস কোম্পানিগুলোকে দিয়ে সরকারকে আলু কেনার পরার্মশ দেন। এ ছাড়া আলু রপ্তানির বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে রংপুরের আট উপজেলায় ৫১ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ১ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর