শিরোনাম
সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

চলেই গেল সেই বাঘিনী

মোস্তফা কাজল

চলেই গেল সেই বাঘিনী

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে থাকা পা হারানো সেই বাঘিনীটি মারা গেছে। গতকাল সকালে ১৫ বছর বয়সী এ বাঘিনী মারা যায়। অভিযোগ রয়েছে, কিছুদিন আগে এটিকে ভুল প্রক্রিয়ায় অচেতন করা হয়েছিল। তখন আরেক বাঘ এটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে আহত করেছিল। কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল ও সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে বেষ্টনীর ভিতর থাকা একটি পুরুষ বাঘকে না সরিয়েই তিন পায়ের এ বাঘিনীকে ভুল প্রক্রিয়ায় ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে অচেতন করা হয়। তখন অচেতন বাঘিনীর ওপর আক্রমণ চালায় পুরুষ বাঘ। পরে অবশ্য বাঘিনীটিকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সে আর সুস্থ হয়নি। অনেকের ধারণা, সুন্দরবনের বাঘের বংশবিস্তার করানো হলে সাফারি পার্কের আকর্ষণ বাড়বে। তাই আফ্রিকা থেকে আনা বাঘের সঙ্গে রাখা হয়েছিল তিন পায়ের এ বাঘিনীকে। তবে সুন্দরবনের বাঘিনীর গর্জনে আফ্রিকার টাইগাররা সবসময়ই চুপসে থাকত। বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের এই বাঘিনীর প্রজনন বিষয়ে রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের দক্ষতার অভাব ছিল। সুন্দরবনের বাঘ হিসেবে এর বংশবিস্তারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা একটি পুরুষ বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে রাখা হয়। শক্তিশালী ও ক্ষিপ্র বুনো এই বাঘিনী ওই বাঘের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে একাকী বসে থাকত। পরে বাঘিনীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেটিকে ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে অচেতন করা হয়। তবে সেটা ভুল প্রক্রিয়ায় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত বাঘকে অচেতন করতে হলে অন্য বাঘগুলোকে আগে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এই বাঘিনীকে ওই বাঘের সঙ্গে রাখা অবস্থায় অচেতন করা হয়। বাঘিনী যখন অচেতন হয় পড়ে, তখন অন্য বাঘ হঠাৎ হামলা করে একে আহত করে। চিকিৎসা করে বাঘিনীর জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হলেও সেটিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। বাঘিনীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক বনসংরক্ষক শামসুল আজম বলেন, বাঘিনীটির বয়স হয়েছিল। সেটির একটি পা ছিল না। কাটা পা দিয়ে রক্ত ঝরত। এ কারণে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে অচেতন করা হয়। তিনি দাবি করেন, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাঘিনীর ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ছাড়া চামড়াও সংরক্ষণ করা হবে। বাঘ বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল ওয়াদুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রজননের জন্য একই জাতের সুন্দরবনের বাঘের সঙ্গে বাঘিনীকে রাখা উচিত ছিল। তিনি বলেন, সাধারণত দেশের চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে যেসব বাঘ থাকে, সেগুলোর সঙ্গে বুনো বাঘ খাপ খাওয়াতে পারে না। প্রজননের ব্যবস্থা না নিয়ে বাঘিনীকে আগের মতো একাকী রাখা হলে হয়তো সে আরও বেশিদিন বাঁচত। সংশ্লিষ্টরা জানান, পা কাটা অবস্থায়ই এই বাঘিনীকে পাওয়া যায় ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায়। সেদিন এই বাঘিনী সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেতকাশি গ্রামের একটি ঘরে অতর্কিতে ঢুকে পড়ে। তখন বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। তারপর খবর পেয়ে বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের কর্মীরা সেখানে পৌঁছান। তারা ট্রাঙ্কুলাইজার গানে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে বাঘিনীকে অচেতন করেন। ধারণা করা হয়, চোরা শিকারিদের ফাঁদে বাঘিনীটির পা কাটা পড়েছিল। উদ্ধার শেষে বন বিভাগের কর্তারা বাঘিনীকে প্রথমে ঢাকায়, পরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে পাঠান। ২০১৩ সালের ২৪ মে এই বাঘিনীকে আনা হয় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। তখন থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে একা ছিল তিন পায়ের এই বাঘিনী। ২০১৬ সালে সাফারি পার্ক-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, সুন্দরবনের বাঘিনীটি প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সঙ্গীহীন। আরও নয়টি বেঙ্গল টাইগারও সুন্দরবনের এই বাঘিনীর কাছে পাত্তা পায়নি। নয়টি বেঙ্গল টাইগার এখানে আনা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এদের জন্ম হয়েছিল গৃহপালিত পরিবেশে। অনেকটা পোষা প্রাণীর মতো নিয়ম করে খাওয়া-দাওয়া করার জন্মগত অভ্যাস গড়ে উঠেছিল এদের মধ্যে। বুনো ভাব একেবারেই নেই বাঘগুলোর মধ্যে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর