বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় কক্সবাজার রেলপথ

দোহাজারী থেকে এখনো ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি

নিজামুল হক বিপুল

সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হলেও চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজের গতি খুবই শ্লথ। জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে এই প্রকল্পের। ১ হাজার ৩১০ একর জমির মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২০ একর জমি পাওয়া গেছে। সেখানেও রয়েছে সমস্যা। অধিগ্রহণকৃত জমির বেশির ভাগের টাকা সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকদের পরিশোধ না করায় পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এমন তথ্যই দিয়েছেন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের  পরিচালক (পিডি)। অন্যদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলছেন, তার দফতরে কাজের তুলনায় জনবল কম থাকায় তারা চাইলেও দ্রুততার সঙ্গে সব কাজ করতে পারছেন না। জমি অধিগ্রহণের মতো জটিল কাজের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনতে সরকার উদ্যোগ নেয় ২০১১ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থ সংস্থান না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। পরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সরকারের এই ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের কাজে সহযোগিতার আগ্রহ দেখালে গত বছরের ১৯ এপ্রিল এ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন দেয় সরকার। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি মিটারগেজের পরিবর্তে পুরোপুরি ব্রডগেজে নির্মিত হবে। একই সঙ্গে রেলপথটি দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সূত্র জানায়, সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে এডিবি। বাকি টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। রেলপথটি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু হয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দুই জেলা প্রশাসনের কাছে প্রায় ১ হাজার ৮২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেয় গত বছরই।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জমি পাওয়া যায়নি। যার ফলে যে গতিতে প্রকল্পের কাজ এগোনোর কথা সেই গতিতে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের জন্য শুধু কক্সবাজার জেলাতেই রেলওয়ের জমি দরকার ১ হাজার একর। সেই জমি অধিগ্রহণের টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ২১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত এই জমির মধ্যেও সমস্যা আছে। জমির মালিকদের অনেকেই টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না। ফলে কাজ করা যাচ্ছে না। যেসব জমির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে সেগুলোতে কাজ চলছে। মফিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম জেলায় তাদের অধিগ্রহণ প্রয়োজন ৩১০ একর জমি। এই জমির টাকাও জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জমি বুঝে পেয়েছে মাত্র ১০ একর। তিনি জানান, গত রবিবার (২ এপ্রিল) কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক বৈঠক করেছেন। ডিসি তাদের আশ্বাস দিয়েছেন, খুব শিগগিরই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গত মাসে আরও ২০০ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কক্সবাজারের ডিসি অফিস তা দিতে পারেনি। তবে ডিসি কামাল হোসেন তাদের বলেছেন, চলতি মাসেই আরও ২০০ একর জমি তারা বুঝিয়ে দিতে পারবেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ডিসি কামাল হোসেন তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, জেলা প্রশাসনের দফতরে লোকবল সংকটের কারণে দ্রুত সবকিছু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, যাদের জমি নিষ্কণ্টক তাদের টাকা পরিশোধ করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আর যেসব জমিতে আপত্তি উঠছে সেগুলো নিষ্পত্তিতে শুনানি করতে গিয়ে সময় লাগছে। তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলায় ৪৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। সেই কাজের তুলনায় তার দফতরে পর্যাপ্ত সার্ভেয়ার, কানুনগো, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এলএও) সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর