শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

শ্রীহীন গাজীপুরে ভোটের লড়াই

জুলকার নাইন, গাজীপুর থেকে ফিরে

শ্রীহীন গাজীপুরে ভোটের লড়াই

ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গাজীপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে গতিময় রাস্তা এয়ারপোর্ট রোড। এ রোড ধরে উত্তরা আবাসিক এলাকা পার হতেই কমে যায় গাড়ির গতি। কমতে কমতে একসময় প্রায় থমকেই যায় দুরন্ত যান্ত্রিক বাহনগুলো। ঠিক এখানেই শুরু দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের। টঙ্গী থেকে নগর ভবন এলাকায় পৌঁছানোর আগেই যেন গাড়িগুলোর শিকড় গজিয়ে যায়। কর্মদিবস কি ছুটির দিন, সবসময়ই এই বিরক্তির যানজট লেগেই থাকে। রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের বিভিন্ন ফাঁক গলে পথ চলতে গেলে আরেক বিপত্তির নাম আবর্জনা।

প্রায় পুরো গাজীপুর সিটি করপোরেশনই যেন ময়লার ভাগাড়। প্রশস্ত সড়কগুলোর অর্ধেকজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ডাস্টবিনের আবর্জনা। রাস্তার বাস থেকে নেমে নাকে-মুখে রুমাল চেপে ডাস্টবিনের ময়লা পার হয়ে গলি রাস্তায় যেতে চাইলেও উপায় নেই। সড়কগুলোর যে পাশে থাকার কথা ফুটপাথ, সেখানে রয়েছে পচা পানির লম্বা ডোবা। আসলে এগুলো পানি নিষ্কাশনের শহুরে ড্রেনের একটি পরিবর্তিত রূপ। বছরের পর বছর ধরে পলিথিন ও আবর্জনা মিশে রাস্তার পাশে এই কালো ডোবাগুলোর  সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন হকাররা। সেটা রাস্তা হোক আর ফুটওভার ব্রিজ। কোথাও একচিলতে জায়গা ফাঁকা রাখেননি দখলদার হকাররা। এর মাঝেই আঁকাবাঁকা পথে বিভিন্ন ফাঁক গলে ছুটে ছুটে আসে হিউম্যান হলার নামের এ ধরনের পরিবহন। অপ্রাপ্তবয়স্ক বেপরোয়া চালকদের এসব যান শৃঙ্খলা বা নিয়ম কোনো কিছুরই ধার ধারে না। পথচারীর একমুহূর্তের অসাবধানতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে যে কোনো বিপদ। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এমন শ্রী নিয়েই নতুন মেয়র নির্বাচন করতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী বড় দুই রাজনৈতিক দলের চার প্রার্থীর বাসভবনে যাতায়াত করতে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই ধারে ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া গলিপথগুলোর বেশির ভাগই কাঁচা সড়ক। এর কয়েকটি ইট বাঁধানো, কোনো কোনোটি একসময় পিচঢালা ছিল বলে ধারণা করা যায়। কারণ, একটু মনোযোগ দিয়ে খুঁজলে এসব গলিপথে ২-৩ গজ পরপর পিচের রাস্তার খণ্ড আবিষ্কার করা যায়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার মালেকের বাড়ির অংশে এক গলিপথে দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ফয়জুল ইসলাম সোহাগের সঙ্গে। সদ্য মাস্টার্স উত্তীর্ণ এই তরুণ বললেন, ‘আমি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় এই গলিতে পানি জমে রাস্তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখন এটি পৌরসভা ছিল। এরপর সিটি করপোরেশন হলো। আমি কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করলাম। কিন্তু রাস্তা আর ঠিক হলো না। অথচ পৌরসভা থাকতে মাঝে মাঝেই রাস্তা সংস্কার হতো।’

জানা যায়, পুরাতন গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং পুবাইল, বাসন, গাছা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, কাউলতিয়া ইউনিয়নের ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি যাত্রা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। বিশাল এ এলাকায় প্রায় ২৫ লাখ লোকের বাস। শিল্পকারখানায় কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলা থেকে আরও প্রায় ৬-৭ লাখ মানুষ প্রতিদিন আসে এই সিটি করপোরেশন এলাকায়। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই প্রথমবারের মতো এই সিটি করপোরেশনে হয় মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন। সেই মেয়াদ শেষে এখন আবার নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। আগামী ১৫ মে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ভোট হবে এই নগরে। এ উপলক্ষে গাজীপুরের অলিগলিতে প্রতিটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। কে কোন দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চায়ের দোকানে চলছে জল্পনা। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র এই এলাকার কোনো উন্নয়ন তো করতেই পারেননি, বরং তার মেয়াদে অব্যবস্থাপনার কারণে এলাকার অগ্রগতি প্রায় এক প্রজন্ম পিছিয়ে গেছে।’ অন্য মেয়র পদপার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে সিটি করপোরেশন করা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি।’ এর পেছনে সিটি করপোরেশনের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিশাল অসংগতি থাকার কথা জানান তিনি। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের মতে, ‘এই সিটি করপোরেশনের এখনো কোনো মাস্টারপ্ল্যান করা যায়নি।’ তিনি মাস্টারপ্ল্যান তৈরিকে সময়সাপেক্ষ বলে দাবি করলেও বলেন, ‘এই সময়ের স্বাভাবিক উন্নয়নও করা সম্ভব হয়নি সরকারের অসহযোগিতার কারণে।’ এ ছাড়া নেতৃত্বেরও কিছু ঘাটতি ছিল বলে মন্তব্য করেন টঙ্গী শিল্প এলাকার একসময়ের প্রভাবশালী এই নেতা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর