শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ শেষের দিকে

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ শেষের দিকে

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ হচ্ছে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) স্থাপনের কাজ। যেটি দেশের ওষুধের চাহিদা পূরণ করবে শতভাগ। এখানকার কারখানায় উৎপাদিত ওষুধ দিয়েই দেশের বাজারে চাহিদা পূর্ণ করে রপ্তানিও করবে ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। একই সঙ্গে পাল্টে যাবে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা তথা জেলার অর্থনৈতিক অবস্থাও। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও ব্যয় এবং সময় দুই বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর অদূরে মেঘনা নদীর পার ঘেঁষে গড়ে ওঠা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশের প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক। ঢাকা থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে উপজেলার বাউশিয়া মৌজায় ২০০ একর জমির ওপর বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে ২০০৮ সালে সরকার এই শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় এপিআই শিল্প পার্কটির। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১৩ কোটি টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ও নানা জটিলতার কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বেড়েছে। সর্বশেষ এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২৫১ কোটি টাকা। আর সিইটিপি নির্মাণের জন্য বাকি ৮০ কোটির জোগান দেবে টাকা ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই প্রকল্পের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তারা এখন প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে। ধারাবাহিক কার্যক্রম শেষে প্রকল্পটি আবারও পাঠানো  হবে একনেক সভায়। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। ওষুধ শিল্প পার্ক সূত্রে জানা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পে ৪২টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জমির প্রতি শতাংশের মূল্য ধরা হয় ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। ৪২টি প্লটের মধ্যে ১০ বিঘা আয়তনের প্লট হচ্ছে ৩৮টি এবং ৮ বিঘা আয়তনের প্লট হচ্ছে ৪টি। এর মধ্যে নির্মাণাধীন এই পার্কে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনে যেতে পারবে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি ওষুধের সুনাম থাকলেও ওষুধের কাঁচামাল বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করার ফলে দেশে তৈরি ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। এখন ওষুধ শিল্প পার্ক স্থাপন হলে ওষুধের দাম কমবে দেশের বাজারেও।  বর্তমানে দেশে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদনে অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপন শেষ হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের দেশীয় চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে ওষুধের কাঁচামালের ৯০ শতাংশ ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। ১৫০-২০০ ধরনের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের আকার ছিল ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুধু বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের বাজার ছিল ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার। গজারিয়ার এপিআই শিল্প পার্ক থেকে ৩৩৫টি কাঁচামাল উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ এখন ১৩৩টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে এবং ২০১৬ সালে ওষুধ রপ্তানি করে ১০ কোটি ডলার আয় করে। প্রকল্প পরিচালক আবদুল বাছেত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পের সরকারি কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। গ্যাস সংযোগ ও প্রকল্প এলাকা থেকে নদী পর্যন্ত ড্রেনসহ রাস্তার কাজ বাকি আছে। এ ছাড়া কাজের অগ্রগতি বাড়াতে এরই মধ্যে এই বিষয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে। ইটিপির জন্য কোম্পানিগুলোই কাজ করছে। তিনি জানান, ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা ১০ বছরে ১০ কিস্তিতে টাকা জমা দিতে পারবে।

প্রতি একর জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা। যারা প্লট পেয়েছেন তারা তাদের প্ল্যানও জমা দিয়েছেন। বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মোহাম্মদ ইফতিখার জানান, ইতিমধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যেই শুরু হবে উৎপাদন। সিইটিপি নির্মাণ, গ্যাস সংযোগের মতো কাজগুলো অচিরেই শেষ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে তাদের অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করে তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা সরেজমিন এই প্রজেক্টটি পরিদর্শন করে যাচাই-বাছাই করছি। এদিকে, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিক ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ৪১টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের অগ্রযাত্রায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার এপিআই শিল্পপার্কটি বড় ধরনের অবদান রাখবে বলে সচেতন মহলের দাবি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর