শিরোনাম
শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

আনন্দ-উল্লাসে জমেছে বৈসাবি মেলা

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

আনন্দ-উল্লাসে জমেছে বৈসাবি মেলা

পাহাড়ে বৈসাবি ঘিরে জমে উঠেছে উৎসবের মেলা। চারদিকে এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর আনন্দ-উল্লাসের জোয়ার। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা সেজেছে নিজেদের ঐতিহ্যের রূপে। তাদের পোশাকের বিচিত্রতায় ফুটে উঠেছে নিজস্ব সম্প্রদায়ের পরিচয়। তারা মেতেছে নানা আচার অনুষ্ঠানে। গতকাল ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। এদিনও ছিল জমজমাট। সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন বয়সের পাহাড়ি-বাঙালি নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীর পদভারে কানায় কানায় ভরে যায় মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলা যেন পরিণত হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর সম্প্রীতির অনন্য মিলন ক্ষেত্রে। মেলায় চলছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের গান, জীবনযাত্রার ওপর আলোকচিত্র, পাচন রান্না, নাটক, খেলাধুলা, গেঙ্গুলি গানের আসর ও নাচ। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এবার বসেছে ৩০টি স্টল। প্রতিটি স্টল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাচান  ঘরের আদলে বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তৈরি। আর এসব স্টলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি-সংস্কৃতি, অলঙ্কার, কোমর তাঁতের তৈরি পোশাক ও বাঁশ আর বেতের তৈরি পণ্য, খাবার, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী স্থান পেয়েছে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলায় চলে আনন্দের হোলি আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্যসংগীত, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, নাটক ও পণ্য প্রদর্শনী। এ মেলা শেষ হবে আজ। তবে বৈসাবি মেলা শেষ হলেও শেষ হচ্ছে না উৎসব। উৎসব চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। থাকছে আনন্দ শোভাযাত্রা, পাহাড়ি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো, বিজু, জলকেলি ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। অর্ধমাসব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর নানা কর্মসূচির মধ্যে জমজমাট থাকবে রাঙামাটি। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু নামে পালন করা হয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণে বৈসাবি এক বৈচিত্র্যময় রূপ ধারণ করেছে। বৈসাবি মূলত পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর উৎসব। এ উৎসবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন হয়। থাকে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ। আশা করি বৈসাবির আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’ উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে প্রতি বছর পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বৈসাবি উৎসব পালন করে আসছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর