শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্ভয়ে চাষাবাদ করে দুই দেশের কৃষক

সীমান্তের ক্রাইম ফ্রি জোন

আনিস রহমান, পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) থেকে

ইছামতী নদী বাংলাদেশের যশোর ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতের কাল্যাণী গ্রামের ইছামতী নদীর ওপারে বাংলাদেশের দৌলতপুর গ্রাম। ইছামতী নদীতে বাঁশের সেতু তৈরি করে দুই দেশের দুই গ্রামের মধ্য সেতুবন্ধ স্থাপন করা হয়েছে। কাল্যাণী গ্রাম থেকে শুরু হয়েছে দুই দেশের সীমান্তে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’। সোয়া ৮ কিলোমিটার সীমান্তে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্রাইম ফ্রি জোন করার পর দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ও কৃষকের অনেক সুবিধা হয়েছে বলে জানালেন ইছামতী নদীর ওপারে বাংলাদেশের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আউয়াল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইছামতীর কোলঘেঁষে বাপ-দাদার কয়েক বিঘা জমি আছে। আগে জমি চাষ করতে গেলে ভয় করত। গত মাস থেকে সেই আতঙ্ক নেই। এখন এই সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের আনাগোনা নেই। বিজিবি-বিএসএফের সেতুবন্ধে নির্ভয়ে জমি চাষ

করছি।’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকা ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণার এক মাসে এখানে কোনো অপরাধ ঘটেনি বলে জানিয়েছে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত ১২ জন সাংবাদিককে ভারতে ক্রাইম ফ্রি জোনের ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ঘুরিয়ে দেখায়। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ৬৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট নীলোৎপাল পাণ্ডে বলেন, ‘ক্রাইম ফ্রি জোনে কোনো ধরনের অপরাধ হয়নি গত প্রায় এক মাসে। ৯ মার্চ যশোরের শার্শা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁও সীমান্তে ৬৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাল্যাণী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ওই ক্রাইম ফ্রি জোন উদ্বোধন করে বিজিবি ও বিএসএফ। গত এক মাসে এই সীমান্ত এলাকায় কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে বিএসএফ ৬৪ ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ড রাগবিন্দার সিং দুই দেশের দুটি বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদের উভয়ের দৃষ্টি সীমান্তে। তাই আমাদের চোখকে চোরাকারবারিরা ফাঁকি দিতে পারেনি।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইছামতী নদীর এপার-ওপার উভয় দেশের মানুষ কৃষিকাজ করছে তাদের জমিতে। ভারতের কালিয়ানি গ্রামের দিলীপ হালদার বলেন, ‘ক্রাইম ফ্রি জোন হওয়ায় আমরাও সংকোচহীনভাবে কাজ করতে পারছি। সীমান্ত এলাকায় এলেও বিএসএফ ও বিজিবি আমাদের সন্দেহ করছে না।’ ইছামতী শাখা নদীর ওপর বাঁশের একটি সেতু তৈরি করেছে বিজিবি ও বিএসএফ। বিএসএফের এক কর্মকর্তা হেসে বলেন, এই সেতুর নাম বন্ধন সেতু। এ সেতু পার হয়ে বাংলাদেশের অংশে গিয়ে কথা হয় দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আউয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১০-১২ বছর আগে ইছামতীর শাখা নদীতে মাছ ধরা হতো কিন্তু এখন মাছ পাওয়া যায় না। মাছ না পাওয়া গেলেও চোরাকারবারিরা জেলে সেজে এই পথ ব্যবহার করত।

তখন ভয়ে কৃষিকাজ করতেও আসতে পারতাম না— বিজিবি ও বিএসএফ সন্দেহ করে যদি গুলি চালিয়ে দেয়। তবে এখন সবাই যার যার খেতে এসে নির্ভয়ে কাজ করতে পারি।’ এদিকে ক্রাইম ফ্রি জোন ঘুরে দেখা যায়, সব এলাকার পাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং সঙ্গে পাকা রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়া একটু দূরত্বে রয়েছে উভয় দেশের বিওপি। আর চোরাকারবারের কুখ্যাত সেই খাধাপাড়া ও আংরাইলে বিএসএফের পাশাপাশি ভারতের পুলিশের একটি টহল পোস্ট দেখা যায়। এ এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করা হয় কিনা— জানতে চাইলে বিএসএফ কলকাতা সেক্টর হেডকোয়ার্টারের কমান্ড্যান্ট মনোজ কে বাড়োয়াল বলেন, ‘এত মনিটরিংয়ে থাকলে প্রয়োজন পড়েনি ড্রোন ব্যবহারের।’ বাংলাদেশ অংশে ক্রাইম ফ্রি জোনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে বিজিবি ২১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক তারিকুল হাকিম বলেন, ‘ক্রাইম ফ্রি জোনে গত এক মাসে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। তবে প্রচেষ্টা নিয়ে অনেকে আটক হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর