শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য-১৫

খোলা হয় না রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি

মাহবুব মমতাজী

খোলা হয় না রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি

শতাধিক বছরের পুরনো ও দেশের প্রাচীন জ্ঞানকেন্দ্র রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি। এক যুগেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল এই পাঠ কেন্দ্র। কারণ ছিল অবহেলা, পরিত্যক্ত ও ঘিঞ্জি পরিবেশ। তবে এখন প্রয়োজনসাপেক্ষে মাঝে মাঝে এটি খোলা হয়, অধিকাংশ সময়ই থাকে তালাবদ্ধ।

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিতে ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে প্রবেশপথের ডানে এই লাইব্রেরি। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮২৮ সালে। ১৮৬৯ সালে পাটুয়াটুলি

রোডে ব্রাহ্মসমাজের ঘর নির্মাণার্থে দাতাদের প্রথম সভায় মন্দিরের প্রবেশপথের ডান দিকে এ লাইব্রেরি স্থাপনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে রাজা রামমোহন রায় ও রিডিংরুম নামে প্রথম এ লাইব্রেরি চালু করেন স্যার কেজি গুপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং পরে সামাজিক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে একসময় দেশের বিশিষ্টজনদের পদচারণে মুখর ছিল এটি। যুদ্ধের সময় এটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। পরে মেরামত করে চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালের পর থেকে অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে ফের দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে লাইব্রেরির রিডিংরুম। বছর দুয়েক আগে ঝাড়ামোছা করা হয়। জানা গেছে, এখন আগের মতো কারও বইপ্রেম কিংবা বই পড়ার আগ্রহ নেই। বাংলাদেশ ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সম্পাদক রণবীর পাল রবি জানান, মাঝে মাঝে লাইব্রেরিটি খোলা হয়। এখানে পুরনো কিছু বইপত্র আছে। এখন এখানে শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও গবেষণা কাজের সঙ্গে জড়িতরা, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আসেন। তিনি সরকার ও সুশীলসমাজের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন এই লাইব্রেরিকে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবারও গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। একই সঙ্গে এখানে জ্ঞানচাঞ্চল্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনারও আহ্বান জানান তিনি। ব্রাহ্মসমাজ সূত্রে জানা গেছে, পুরনো লাইব্রেরি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ২০০৪ সালের ৯ মে এটি সাত দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার একটি নোটিস জারি করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পরে সময় ক্ষেপণ এবং ব্রাহ্মসমাজের ট্রাস্টি ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদাসীনতা, বোঝাপড়ার অভাবে রাজউকের নির্দেশটি চাপা পড়ে যায়। পাঁচ বছর পর ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরনো ওই ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ভবনের সংস্কার ও ভাঙায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে ব্রাহ্মসমাজ কর্তৃপক্ষের পাল্টা তৎপরতায় এ ভবনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা যাবে না— মর্মে একই বছরের ১১ নভেম্বর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক ড. শফিকুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়। পরে ভবনটি ভাঙার রাজউকের ছাড়পত্র ও পুনর্নির্মাণের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে হাই কোর্টে একটি রিট করে আরবান স্টাডি গ্রুপ নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন হাই কোর্টে মামলা চলায় লাইব্রেরির পুনর্নির্মাণ, সংস্কার ও পুনরায় জ্ঞানচর্চার কার্যক্রম ঝুলে থাকে। একই সঙ্গে তার অধীন ব্রাহ্মসমাজের দাতব্য চিকিৎসা ও সেলাই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভবনটির সব অবকাঠামো ঠিক রেখে লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, পুরান ঢাকার এই লাইব্রেরি একসময় ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, শওকত ওসমান, কবীর চৌধুরী, ড. আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক ও মুনতাসীর মামুনদের মতো বিশিষ্টজনদের পদচারণে মুখরিত থাকত। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ, দেশ-বিদেশের লেখকদের রচনাসমগ্র, সাহিত্য, ইতিহাস, শিশু শিক্ষামূলক ও ব্রাহ্মসমাজের সংশ্লিষ্ট ৫ শতাধিক বই রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর