সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেয়র প্রার্থী ও স্ত্রী-নির্ভরশীলদের নামেও সম্পদ

হলফনামা

গোলাম রাব্বানী

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের সম্পদের শেষ নেই। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন। সেই সঙ্গে স্ত্রী-নির্ভরশীলদের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ। প্রার্থীদের অনেকেই ব্যবসায়ী। এ ছাড়া কৃষি, মত্স্য ঘের ও বাড়ি ভাড়া থেকেও আয় আসে প্রার্থীদের। ঋণ ও মামলাও রয়েছে কয়েকজনের নামে। নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জাহাঙ্গীরের বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ : গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পেশার বিবরণীতে তিনি নিজেকে দুই    প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সেই হিসেবে তিনি ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। আগে দুটি মামলা থাকলেও ২০০৪-০৫ সালে তা থেকে অব্যাহতি পান জাহাঙ্গীর। তার বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার কৃষি খাত থেকে আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাড়ি-দোকান ভাড়া থেকে আয় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৯৪ লাখ ২০ হাজার, অন্যান্য খাত থেকে (১৯ ই ধারায় আয়) ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার। অস্থাবর সম্পদের তালিকায় রয়েছে— নগদ ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৮ টাকা, ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা, ব্যবসার পুঁজি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ টাকা, শেয়ার ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার, সোনা ৩৫ তোলা, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকা। মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৮ কোটি ৮৫ লাখ ১ হাজার ৭৩৬ টাকা। দুটি গাড়ি রয়েছে তার। স্থাবর সম্পদ কৃষি জমি ১৪১৫.১৫ শতক, অকৃষি জমি ৩৩.৭১২৪ শতক, দালান-আবাসিক ৭.৪৩৭৬ শতক। দায় দেনা ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন জমি বিক্রয়ের বায়না বাবদ ৮ কোটি টাকা। তবে কোনো ঋণ নেই। কিন্তু তিনি স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের নামে স্থাবর-অস্থাবর বা কোনো আয় আছে কি না তা উল্লেখ করেননি।

হাসানের বার্ষিক আয় ১০ লাখ : বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে (বিচারাধীন)। আগেও তিনটি মামলা ছিল। কৃষি থেকে ৬৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ৫ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ১১ হাজার ৫২৬ টাকা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। তার নিজের মোট বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৬ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় কৃষি ২৫ হাজার ২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৬ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা, ব্যাংক সুদ ৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। অস্থাবর সম্পদে রয়েছে, নগদ টাকা ৩ লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৬০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০১ টাকা, ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি গাড়ি রয়েছে, সোনা ২১ তোলা, একটি শটগান ও একটি পিস্তল ৫২ হাজার। তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৮৭ লাখ ১ হাজার ৬০১ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে, নগদ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫৮ হাজার ৫৪২ টাকা, সোনা ৩২ তোলা, ১০ হাজার টাকার একটি এক নালা বন্দুক। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি ৫০০.৫৩১ শতক, দালান বা আবাসিক ৭.৫ শতক জমির ওপর ৫টি দোকান, ৯০ শতক জমি ও স্থাপনা, সেমিপাকা ৩২টি রুম, একচালা টিনশেড ঘর। স্ত্রীর নামে রয়েছে কৃষি জমি ২০৮.৮৩৫, অকৃষি জমি ৯৭ শতক, ৩২ রুমের ছাপরা ঘর। বাড়ি ২৯০০ বর্গফুটের ৪ তলা বাড়ি। ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ টাকার।

ফজলুর রহমান : ইসলামী ঐক্যজোটের মেয়র প্রার্থী, পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে আয় ২ লাখ ৫০ হাজার, চাকরি থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার ও ওয়াজ মাহফিল থেকে সম্মানী ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ নগদ টাকা ২ লাখ, ব্যাংকে ৫ লাখ, স্ত্রীর নামে ২৫ ভরি সোনা। ঋণ রয়েছে।

নাসির উদ্দিন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী তিনি। সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০, শিক্ষকতা থেকে আয় ২ লাখ ১৬ হাজার, অন্যান্য থেকে ১৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নগদ টাকা ৩৮ হাজার ১৮০। স্ত্রীর নামে ২০ ভরি সোনা।

কাজী রুহুল আমিন : সিপিবি প্রার্থী তিনি। তার চাকরি থেকে আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নগদ ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ টাকা, সোনা ৫ তোলা রয়েছে তার।

সানাউল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামায়াত) : মামলা দুটি, কৃষি থেকে আয় ৫০ হাজার, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৫০ হাজার, ব্যাংকে ৪ লাখ ৩১ হাজার, সঞ্চয়পত্র অন্যান্য আমানত ৪ লাখ, ১৫ ভরি সোনা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি। স্থাবর সম্পদ কৃষি জমি এক বিঘা, অকৃষি ৪ বিঘা, দালান বাড়ি একটি।

খুলনার খালেকের আয় ৫২ লাখ : পাঁচ বছরের ব্যবধানে খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বার্ষিক আয় কমেছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। তবে এই সময়ের মধ্যে তার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় এসব তথ্য জানা গেছে। সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় তালুকদার আবদুল খালেক ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ৭০ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৩ টাকা। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ৫২ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৪ টাকা। ওই সময় নগদ টাকা, ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল প্রায় ৯ কোটি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ১০৮ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৩ হাজার ৪৫৮ টাকা। কেসিসি নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে মত্স্য ঘের ব্যবসাকে দেখিয়েছেন। তার নগদ টাকা রয়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা ও স্ত্রীর ২ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। নিজের নামে তিনটি ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৬ টাকা আর স্ত্রীর নামে দুটি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা। এ ছাড়া এসবিএসি ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে দুই কোটি টাকার। তাছাড়া সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার, এফডিআর ১০ লাখ টাকার ও স্ত্রীর ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৯ টাকা, পোস্টাল এফডিআর ১৮ লাখ টাকার। স্বামী-স্ত্রীর গাড়ি রয়েছে মোট তিনটি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি জমি রয়েছে ২৩ বিঘা, অকৃষি ৩ কাঠা জমি, নির্মাণাধীন বাড়ি, রাজউক পূর্বাচল প্লট ও একটি পাঁচতলা বাড়ির অর্ধাংশ রয়েছে তার। এ ছাড়া মত্স্য ঘেরে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৯০০ টাকার। কোনো মামলায় অভিযুক্ত না হলেও নয়টি মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ইতিমধ্যে সবকটিতেই অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন।

মঞ্জুর আয় ২ লাখ : বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর আগে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, আর ব্যয় ছিল ১ লাখ টাকা। ওই নির্বাচনের সময় তার আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা।

এবারও হলফনামায় পেশা ব্যবসা দেখানো হলেও বর্তমানে সেই ব্যবসা বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তার আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বাড়িভাড়া। এ ছাড়া নিজের চেয়ে স্ত্রী অ্যাডভোকেট সৈয়দা সাবিহার নামে ১৯ গুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) রয়েছে।

যৌথ মালিকানায় চারতলা ভবন রয়েছে। এটিতে মঞ্জুর অংশ ২/৭ শতাংশ। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন খুলনা অফিস থেকে তার বাবা আবদুল হালিম ৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। মঞ্জুর শিক্ষাগত যোগ্যতা আইনে স্নাতক পাস। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া খুলনা থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আগের তিনটি মামলার একটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর দুটি মামলায় ফাইনাল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

শফিকুর রহমান : জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (মুশফিকুর রহমান) স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। তার বিরুদ্ধে খুলনা ও বরিশালে দুটি মামলা রয়েছে। পেশা হিসেবে কৃষিজাত পণ্যের ব্যবসায়ী ও কৃষিজমিতে চাষাবাদ দেখানো হয়েছে। কৃষি খাতে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫০ টাকা। হলফনামায় তার কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই বলে দাবি করা হয়েছে।

মুজ্জাম্মিল হক : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক শিক্ষাগত যোগ্যতা ফাজিল পাস। তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। যৌথ মূলধনী ব্যবসায় তার বিনিয়োগ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক আমানত ১ লাখ ও নগদ ১ লাখ টাকা রয়েছে।

মিজানুর রহমান বাবু : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। আয়ের উৎস পাদুকা ব্যবসা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকার সিসি হাইপো ঋণ নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর