সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশের চাঁদাবাজি থামান

ডিসিসিআইর সেমিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল মতিঝিলের চেম্বার ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ— ডিসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, রমজানে বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি হয়। যার প্রভাব পড়ে দ্রব্যমূল্যে। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাউকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস করতে দেব না। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিচ্ছি। চাঁদাবাজ পুলিশ থাকার কথা স্বীকার করে মন্ত্রী আরও বলেন, পণ্যে ভেজাল করেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ ভেজাল করে না। আবার ভেজালকারীদের পুলিশ ধরার পর তদবিরও আসে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে এই সভার আয়োজন করে ডিসিসিআই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেবে না। অন্যদের দুর্বলতার কারণে চাঁদাবাজির সুযোগ পায় পুলিশ। মাদকের ভয়াবহতা বন্ধে গাড়ি থামিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। আবার গাড়ি থামালে সড়কে যানজটও হয়। মহাসড়কে যানজটের বিষয়ে তিনি গাড়ির চালকদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানান। বিপণি বিতানসমূহে নিরাপত্তা বিধানে সরকারের পক্ষ থেকে সব উদ্যোগ গ্রহণেরও আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও ডলারের দাম ওঠা-নামার ফলে দেশি বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে। রাস্তাঘাটে যানজট, বন্দরসমূহে জাহাজ ও পণ্যবাহী ট্রাকের জটের ফলে বিশেষ করে রমজান মাসে চাহিদা মাফিক পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়। তাই এ সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও উদ্যোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য রোধকল্পে অবশ্যই সব সংস্থার সমন্বয়ে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, মূল্যবৃদ্ধির মূলে রয়েছে প্রথাগত বাজার সরবরাহ প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, দুর্বিষহ যানজট এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়। তিনি ডিসিসিআইয়ের সাতটি সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, রমজানে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। জাল টাকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত মজুদ বন্ধ ও বাজার তদারকি করতে হবে। দেশের সব বাজারে মূল্য তালিকা হালনাগাদ ও কার্যকর করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিয়া রহমান বলেন, রমজান মাসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রচেষ্টা দেখা যায়। এটা হয় মূলত পণ্যের চাহিদা ও জোগানের ঘাটতির কারণে। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ‘ন্যায্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সেল’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, সরকার যদি রমজানের আগে বাজারে কি কি পণ্যের চাহিদা কত তা নিরূপণ করতে পারে, তাহলে তার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে সক্ষম হবে। ফলে পণ্যের কৃত্রিম সংকট হবে না। সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিসিসিআইয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, রমজানে পণ্যের ঘাটতি পূরণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ— টিসিবি’কে দায়িত্ব নিতে হবে। সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন নামে রমজানে যে উৎসব হয় তাতে চাঁদাবাজি হয়। অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় আছি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মো. সিরাজ উদ্দিন মালিক, রিয়াদ হোসেন, মো. আবুল হাশেম, শফিকুল ইসলাম, আলাউদ্দিন মালিক, এস এম জিল্লার রহমান, এনামুল হক পাটোয়ারি, হোসেন এ সিকদার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর