সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অশুভ শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

আট দিনের সফরে গেলেন সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্মীয় আবরণে নববর্ষ উদযাপনে বিএনপির বাধা দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবিরোধী ‘অশুভ শক্তি’ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত শনিবার সকালে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপন উপলক্ষে গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নববর্ষে এটুকুই চাই, আমাদের দেশে যেন কখনো কোনো ধরনের অশুভ শক্তি না আসে, যারা আমাদের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত করবে, ভাষার ওপর আঘাত করবে, সংস্কৃতির ওপর আঘাত করবে, আমাদের নিজেদের কৃষ্টির ওপর আঘাত করবে। এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। ১৯৯৩ সালে ১৪০০ সাল উদযাপনে সে সময়ের ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের বাধা দানের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ধ্বংস করা হয়নি, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা পরাজিত শক্তির আদর্শেই দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৩ সালে আমরা যখন ১৪০০ সালে পদার্পণ করব, আমরা নতুন শতাব্দীকে বরণ করার জন্য একটা কর্মসূচি ঘোষণা দেই এবং একটা জাতীয় কমিটি গঠন করি। কবি সুফিয়া কামালকে প্রধান করে নতুন শতাব্দীকে বরণ করতে আমরা একটা অনুষ্ঠানসূচি দেই। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল খালেদা জিয়া, বিএনপি। তারা আমাদেরকে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে তো দেবেই না, এমনকি নতুন শতাব্দীতে যে আমরা পদার্পণ করতে যাচ্ছি, সেটাও উদযাপন করতে দেবে না। তারা ব্যাপকভাবে আমাদের বাধা দিল। বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা একটি ধর্মীয় আবরণ দেওয়ার চেষ্টা করল। ১৩০০ সাল পার হয়ে আমরা ১৪০০ সালে পদার্পণ করব, সেখানে যে এটি পালনে বাধা আসবে, সেটা আমরা ভাবতেই পরিনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা ঢুকতে পারব না। তবে বিএনপি সরকারের বাধা উপেক্ষা করেই সে সময় নববর্ষ উদযাপন হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।  মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে বাঙালি ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার মিঠাই, মোয়া, মুড়ি-মুড়কি, মুড়লি, কদমা, জিলাপি প্রভৃতির দ্বারা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর নববর্ষের শুভেচ্ছা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের সব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ গত বছরের মতো এ বছরও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখর, উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর এ শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পরিবারের সদস্যরা জানান, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই কেবল তারা যথাযথ সম্মান পান। তারা প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে ৮ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে ৮ দিনের সরকারি সফরে গতকাল বিকালে ঢাকা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে সৌদি আরবের দাম্মামের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। আজ সোমবার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় আল জুবাইল প্রদেশে অনুষ্ঠেয় ‘গালফ শিল্ড-১ নামের একটি যৌথ সামরিক মহড়ার কুচকাওয়াজ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী পরে বিকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে দাম্মাম ত্যাগ করবেন। তিনি ২৩ এপ্রিল দেশে ফিরবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধান, সৌদি আরবের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী ১৭ এপ্রিল সকালে ওয়েস্ট মিনিস্টারের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ নারী ফোরামের ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার : মেকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রোস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিকালে যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ থিঙ্কট্যাংক বৈদেশিক উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (ওডিআই) আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিনি ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি : নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ১৮ এপ্রিল শেখ হাসিনা এশীয় নেতাদের ‘ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোইং’ রাউন্ডটেবিলে অংশ নেবেন। বিকালে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ও পরে নৈশভোজে যোগ দেবেন। ১৯ এপ্রিল শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকের (সিএইচওজিএম) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। ২১ এপ্রিল তিনি রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি (আরসিএস) আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকারপ্রধানদের জন্য সংবর্ধনা এবং রানীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী এক কমিউনিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি ২৩ এপ্রিল দেশে ফিরবেন।

সর্বশেষ খবর