মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

গ্রামীণ নারী ঝুঁকছে আধুনিক চুলায়

ইডকল-এর উন্নত চুলা প্রকল্প

জিন্নাতুন নূর, বগুড়া থেকে ফিরে

গ্রামীণ নারী ঝুঁকছে আধুনিক চুলায়

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সন্ধ্যাবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির রান্নাঘরের ওপর ছোট ছোট টুপি বসানো প্লাস্টিকের পাইপ দেখা যায়। যেসব রান্নাঘরে চুলায় আগুন জ্বলছিল, চুলার ধোঁয়া পাইপের সেই টুপির ফাঁক গলে বের হয়ে আসছিল। এই ধোঁয়া যাতে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে না পারে এজন্য তা পাইপ দিয়ে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস এবং ঘরের ভিতর বায়ু দূষণ রোধের লক্ষ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিঃ (ইডকল) পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক এই চুলা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করে। আণবিক শক্তি কমিশনের এক পরীক্ষায় দেখা যায় যে, সাধারণ মাটির চুলার তুলনায় এই চুলায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি শতকরা ২০ শতাংশ কম। আর এর ব্যবহারকালে কার্বন শতকরা ৩০ শতাংশ এবং কার্বন মনোঅক্সাইড ৯০ শতাংশ কম উৎপন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডকলের ইমপ্রুভড কুক স্টোভ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন। সে সময় ২০১৮ সালের মধ্যে দেশব্যাপী ১০ লাখ চুলা স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও গত বছরেই সে লক্ষ্য পূরণ হয়। আগামী ২০২১ সালে ৫০ লাখ চুলা স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইডকলের এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের শুরুতে সারা দেশে গড়ে মাসে ১০ হাজার চুলা বিক্রি হতো। আর বর্তমানে তা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার চুলা বিক্রি হচ্ছে। আধুনিক এই চুলার নকশা করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সম্প্রতি সরেজমিন সন্ধ্যাবাড়ি গ্রামের গৃহিণী ফাতেমা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইডকলের ইমপ্রুভড কুক স্টোভ অর্থ্যাৎ আধুনিক চুলাটিতে রান্না করতে দেখা যায়। ধোঁয়াবিহীন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রান্নাঘরে তিনি চুলায় যে হাঁড়িতে রান্না করছিলেন তার তলা ছিল কালিবিহীন। সাধারণত মাটির চুলা ব্যবহারকারী গৃহিণীরা রান্না করার সময় মাঝে মধ্যে আগুন উসকে দিতে চুলার কাছে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আর এ সময় আগুনে সৃষ্ট ধোঁয়ায় তাদের অনেকেরই চোখ জ্বলে, কারও চোখ বেয়ে পানিও পড়ে।

কিন্তু ইডকলের চুলা ব্যবহারকারী ফাতেমাকে এ ধরনের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফাতেমা জানান, মাটির চুলার তুলনায় এই চুলায় কাঠ কম লাগে। আবার রান্নার সময় হাড়িতে কালিও পড়ে না। খাবারও দ্রুত তৈরি হয়। ফাতেমার মতো এই গ্রামের আরেক গৃহিণী সখিনা আক্তারও ইডকলের চুলা ব্যবহার করছেন। তিনি জানান, জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় গ্রামের অন্য গৃহিণীরাও এই চুলা স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছেন। ইডকল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে বগুড়াসহ সারা দেশে ইডকল ২৯০টি উপজেলায় ৬৬টি সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় ইমপ্রুভড কুক স্টোভ প্রকল্প চলছে। শুধু বগুড়াতেই এক লাখ ৮৯ হাজার ১০৫টি চুলা স্থাপন করা হয়েছে। দুই মুখের (ডাবল মাউথ স্টোভ) একটি চুলা স্থাপনে খরচ হয় এক হাজার আর এক মুখের চুলা স্থাপনে খরচ ৮০০ টাকা। বগুড়ায় ইডকলের সহযোগী সংস্থা হিসেবে দিশারী উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠন এই চুলা স্থাপন, তার উৎপাদন এবং এর প্রচারনার কাজ করছে।

বগুড়ায় ইডকলের সহকারী পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, এই চুলার বাইরের অংশ কংক্রিটের তৈরি, এর মধ্যে লোহার ছাকনি আছে। এজন্য এতে সাধারণ চুলার চাইতে অক্সিজেনের সরবরাহ বেশি হয়। আর ধোঁয়া বের হওয়ার জন্য এতে তিন ইঞ্চি লম্বা পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। এই পাইপে টুপি থাকায় বৃষ্টির পানি ঢুকে না। তিনি জানান, বগুড়ার সন্ধ্যাবাড়ির ৩০০টি পরিবারের মধ্যে ১৫০টি পরিবারই এখন এই চুলা ব্যবহার করছে।

দিশারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জেএম রহমান সাগর বলেন, হাতে বানানো চুলার চেয়ে এই চুলায় জ্বালানির খরচ কম। আবার এক চুলার খড়ি দিয়েই দুই মুখের চুলায় দুটি হাঁড়িতে রান্না করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর