মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
নিখোঁজের ৬ বছর আজ

এখনো ইলিয়াসের ফেরার অপেক্ষা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এখনো ইলিয়াসের ফেরার অপেক্ষা

সময় পেরিয়ে আজ অর্ধ যুগ। ইলিয়াস আলীর জন্য অপেক্ষার নিদারুণ প্রহর আজও ফুরোচ্ছে না। গাড়িচালক আনসার আলীসহ বিএনপির সাবেক এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এই দীর্ঘ সময় পরও তার জন্য রয়েছে পরিবারের ও সিলেট বিএনপির অপেক্ষা।

ঘুমের ঘোরে ইলিয়াস আলীকে স্বপ্নে দেখেন তার মা সূর্যবান বিবি। আর ফিরে এসে অভাবের সংসারে আনসার আলী হাল ধরবেন, এমন আশায় আছেন তার মা নুরজাহান বেগম। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালকসহ ‘নিখোঁজ’ হন ইলিয়াস আলী। ওই সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। সিলেট-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের সঙ্গে একই পরিণতি বরণ করতে হয় তার গাড়িচালক আনসার আলীকে। ইলিয়াসের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা গ্রামে আর আনসার আলীর বাড়ি একই উপজেলার গুমরাগাল গ্রামে। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সারা দেশ। বিশেষ করে তার সন্ধান দাবিতে উত্তাল ছিল সিলেট। সেই আন্দোলনে বিশ্বনাথে তিনজনসহ সারা দেশে প্রাণ হারান আটজন। প্রথম দিকে ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে সরব ছিলেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কণ্ঠস্বর ম্রিয়মাণ হয়ে গেলেও এখনো ১৭ এপ্রিল দিনটিতে ইলিয়াসের জন্য রাজপথে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া মিলাদ, দোয়া মাহফিলও করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। ইলিয়াসের সন্ধানের জন্য তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তার পরও খোঁজ মেলেনি। বাংলাদেশের উজানে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন ইলিয়াস আলী। তার জন্য আজও পথ চেয়ে থাকেন মা সূর্যবান বিবি। গতকাল দুপুরে রামধানা গ্রামে গিয়ে কথা হয় সূর্যবান বিবির সঙ্গে। সজল চোখে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রায় রাতেই স্বপ্নে দেখি আমার ইলিয়াস ফিরে এসেছে। আমি এখনো তার অপেক্ষায় আছি। আমার ছেলে কী অপরাধ করেছে, আমার জানা নাই। আমি আশায় আছি আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবেন।’

ইলিয়াস আলীর মতো আনসার আলীর জন্যও তার পরিবার অন্তহীন অপেক্ষায় আছে।

আনসার আলীর মা নুরজাহান বেগম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার অভাবের সংসার। আমি নানা রোগে আক্রান্ত। আনসার আলী সংসার চালাত, আমার চিকিৎসার খরচ চালাত। ছয় বছর ধরে আমার বাচ্চা গুম হয়ে আছে। সংসারে এখন অভাব, আমার চিকিৎসাও হয় না ঠিকমতো। কেউ এখন খোঁজ নেয় না আমাদের।’

আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ‘আমি এখনো আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আছি। মেয়েকে নিয়ে এই আশায় বেঁচে আছি। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ইলিয়াস আলী আর আনসারকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’ আনসার আলীর শিশুকন্যা চাঁদনি বলে, ‘আব্বুর জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি দাদুর কাছে জিজ্ঞেস করি আব্বু কোথায়, কবে আসবে। দাদু শুধু দোয়া করতে বলেন।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘ইলিয়াস আলী বিএনপির নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করতেন। সরকারের অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন তিনি। তাকে স্তব্ধ করে দিলে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে, এই চিন্তাতেই সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যদি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে ইলিয়াস আলীকে আমরা ফিরে পাব।’

সর্বশেষ খবর