বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের প্রস্তুতিতে ইসলামী দলগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ভোটের প্রস্তুতিতে ইসলামী দলগুলো

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইসলামী দলগুলো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় ও ব্যক্তিগত নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি জোটে থাকা ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি বাইরে থাকা দলগুলোও রয়েছে। সংবিধান অনুসারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছু ইসলামী দলের মতভেদ থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই কেউ। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন হারানোর পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামপন্থি দলের সংখ্যা এখন ১২টি। এর মধ্যে ছয়টি দল শরিয়া আইন বাস্তবায়নের দাবিতে রাজনীতি করে। মুসলিম লীগের দুই অংশ বাদে বাকি চারটি দল মাজার ও সুফিপন্থি। জামায়াতসহ শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজনীতি করা ইসলামপন্থি দলগুলোর নেতারা দাবি করেন, সারা দেশে তাদের ২০ শতাংশ ভোট আছে। তবে কোনো নির্বাচনেই দলগুলোর প্রাপ্ত সম্মিলিত ভোট ১৪ শতাংশের বেশি ছিল না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ  বা প্রায় ৪৪ লাখ। বড় দুই জোটে থাকা দলগুলো আসন ভাগাভাগির হিসাব কষছে। এর বাইরে থাকা কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল পৃথক মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে। ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় মোর্চার উদ্যোক্তা ছাড়াও আরও অন্তত তিনটি দল। তাদের সবার লক্ষ্য, আগামী নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন। অনিবন্ধিত জামায়াত ছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা ঘরানার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস। এ দুই দল হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মুসলিম লীগের একাংশও রয়েছে ২০ দলে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে সুফি ঘরানার তরীকত ফেডারেশন। জাপা জোটের শরিক ইসলামী ফ্রন্ট। জামায়াতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে পরিচিত চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন কোনো জোটে নেই। হেফাজত-সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত আন্দোলনও জোটবিহীন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার পর তাদের নিয়ে পৃথক মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে ইসলামী ঐক্যজোট। আরও তিন ইসলামপন্থি দল জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট ও মুসলিম লীগের অপরাংশও কোনো জোটে নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪৩ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছিল জামায়াত। এবার তাদের চাওয়া অন্তত ৫০ আসন। এরই মধ্যে দলটি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ২০১৩ সালে হাই কোর্টের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আপিলে নিবন্ধন ফিরে না পেলে আগামী নির্বাচনে দলীয় পরিচয়ে অংশ নিতে পারবে না দলটি। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত মনোনীতরা। আগামী নির্বাচনে একই পথে হাঁটতে পারে দলটি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে না থাকলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে ইসলামী আন্দোলন। দলটি এবার এককভাবে ভোটে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ জানিয়েছেন, তারা কোনো জোটে যাবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আগামী নির্বাচনে ২০০ আসনে প্রার্থী দেবে। দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানতে চাইলে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, অন্য দলগুলোর নীতির সঙ্গে আমাদের নীতির মিল না হওয়ায় জোট গঠন হয়নি। আমরা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিকভাবে ২০০ আসনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ইসলামী ঐক্যজোট আগামীতে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট নিজস্ব প্রতীকে এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে ২৭২টি আসনের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলগুলো চাইলে জোট হতেও পারে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তরীকতকে দুটি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দুটি আসনে জয়ী এ দলটির সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি জানিয়েছেন, এবার তাদের লক্ষ্য ১০টি আসনে নির্বাচন। এগুলোতে তারা মহাজোটের মনোনয়ন চান। মাওলানা মুহম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকেই অংশ নেবে। খেলাফত মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের জানিয়েছেন, তারা তালিকা দেবেন বিএনপিকে। অন্তত পাঁচটি আসনে জয়ী হওয়া তাদের লক্ষ্য। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সম্প্রতি ভেঙে গেছে। দুই অংশই বিএনপির শরিক। শায়খ আবদুল মোবিনের নেতৃত্বাধীন অংশ জোটের কাছে অন্তত পাঁচটি আসন চায়।

সর্বশেষ খবর