শিরোনাম
শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল বাইসাইকেলের পার্টস উৎপাদন যশোরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

মোটরসাইকেল বাইসাইকেলের পার্টস উৎপাদন যশোরে

এক সময় ভারত থেকে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের পার্টস আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করতেন যশোরের ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন। এতে লাভের পরিমাণ ভালো থাকলেও তার মনে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন বাসা বাঁধতে শুরু করে। ভারত থেকে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি না করে দেশেই এসব যন্ত্রাংশের উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে তোলা যায় কি না, ভাবতে থাকেন তিনি। সেই ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করেন বছর তিনেক আগে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে যশোরের বিসিক শিল্পনগরীতে এক বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন মদিনা মেটাল ইন্ডাস্ট্রি। যেখানে শুরু করেন বাইসাইকেল, রিকশা-ভ্যানের রিম উৎপাদন। মদিনা মেটাল ইন্ডাস্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আগে ভারত থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রিম আমদানি করতে হতো। এখনো আর কোনো রিম আমদানি করতে হয় না। আমরাই মাসে ৪০ থেকে ৬০ হাজার রিম উৎপাদন করছি। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও রিম উৎপাদন করছে। সব মিলিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে এখন আর রিম আমদানি করতে হয় না। বেঁচে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা’। সাব্বির রহমান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত রিম দেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলাতেই সরবরাহ করা হয়। মদিনা মেটাল ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত রিমের মান অনেক ভালো, ওজনে বেশি, অনেক টেকসই। যে কারণে সারা দেশেই এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি, শিগগিরই আমরা মাসে এক লাখ রিম উৎপাদন করতে পারব’। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৮০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে, যার মধ্যে ১০ জন নারী শ্রমিকও আছেন। নারী শ্রমিক জোহরা বেগম বলেন, ‘এখানে কাজ করে আমরা অনেক ভালো আছি। প্রতিষ্ঠানের মালিক আমাদের সব ধরনের সুযোগ- সুবিধা দিয়ে থাকেন। দুপুরের খাওয়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, এমনকি অসুস্থ শ্রমিকের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে’। শ্রমিকবান্ধব প্রতিভাবান উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই বিআইডিএসের সম্মাননা পেয়েছেন মদিনা মেটালের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন। স্বপ্ন দেখেন আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সেই চলার পথে রয়েছে বেশ কিছু বাধাও। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার সাব্বির হোসেন বলেন, যশোরের বিসিক শিল্পনগরীতে তাদের এই ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এই বিসিক শিল্পনগরীতে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই করুণ। বছরের পর বছর ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না। পানির লাইনের অবস্থা খুবই খারাপ। নিরাপত্তা ব্যবস্থার বালাই নেই। রাতে সব দুষ্কৃতকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বিসিক। নাইট শিফটে কাজ করা কর্মী, বিশেষ করে নারী কর্মীদের নিয়ে সব সময় আমাদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অথচ এসব বিষয় দেখার জন্য আমরা বছরে লাখ লাখ টাকা বিসিককে দিয়ে থাকি। উৎপাদন পরিসর বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন স্বল্প সুদের ঋণ। আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য যদি বিসিকের মাধ্যমে স্বল্প সূদে ঋণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আরও অনেক বেশি উদ্যোক্তা উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে। সাশ্রয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার।

সর্বশেষ খবর