শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুলনার ৭ নদীতে মাছের ঘের ও বসতবাড়ি

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২৩তম পর্ব আজ।

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার ৭ নদীতে মাছের ঘের ও বসতবাড়ি

১৯৯০ সালেও খুলনার ডুমুরিয়ায় হামকুড়া নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ ছিল। এখন জোয়ার-ভাটা দূরের কথা, নদীরই কোনো অস্তিত্ব নেই। পলি পড়ে ভরাট হয়ে নদীর বুক উঁচু জমিতে রূপান্তর হয়েছে। তা দখল করে যে যার মতো বসতবাড়ি, মাছের ঘেরসহ চাষাবাদে ব্যবহার করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার পরও হামকুড়া নদীতে বড় বড় পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলেছে। এখন নদীটির কোনো অস্তিত্বই নেই। নদী চলাচলের জায়গায় কয়েকটি সেতু দাঁড়িয়ে থাকায় বোঝা যায় এখানে এক সময় নদী ছিল।’ হামকুড়ার মতো খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের ৭টি নদী ও শাখা নদী পলি জমে ভরাট হয়ে এখন অস্তিত্বহীন। যেসব নদীতে এখনো জোয়ার-ভাটার প্রবাহ আছে সেগুলোও পলি জমে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। খুলনার নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, হামকুড়া নদীর মতো অসংখ্য নদী ইতিমধ্যে মরে গেছে। অস্তিত্বহীন হয়েছে মরিচ্ছাপ, হিসনা, কুমার, মুক্তেশ্বরী ও হরিহর নদী। আঠারোবেকি নদীর এখন ৫০ ভাগই মৃত। বেতনা, নবগঙ্গা, চিত্রা, কাজিবাছা, শালতা, কাকশিয়ালী, পশুরসহ খরোস্রোতা নদীগুলোও মৃতের পথে। মূলত দক্ষিণাঞ্চলের কুমার, নবগঙ্গা, চিত্রা, ভৈরব, কপোতাক্ষ, ইছামতিসহ অসংখ্য নদীর উজানের পানির উৎসমুখ মাথাভাঙ্গা নদী। আর মাথাভাঙ্গা নদীর উৎসমুখ পদ্মা। এই মাথাভাঙ্গা নদীতে উজানের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। জানা যায়, ৬০-এর দশকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ও কৃষিকে লবণ পানি থেকে রক্ষায় এখানকার নদীর পাড়ে উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পোল্ডার করা হয়। এতে মূল নদীর সঙ্গে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার শাখা নদীর পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণেই পলি জমে ভরাট হয়ে শাখা নদীগুলো এখন অস্তিত্বহীন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার সমন্বয়কারী নদী গবেষক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, মূলত ফারাক্কার প্রভাবেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নদীগুলোতে বছরে প্রায় ১০৬ কোটি মেট্রিকটন পলি প্রবাহিত হয়। যা একসময় নিচু ভূমি, বসতভিটা ও কৃষিজমিতে জমা হতো। কিন্তু বেড়িবাঁধের কারণে ও একই সঙ্গে নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় এসব পলি এখন নদীগর্ভে জমা হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী মরে যাওয়ার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে। পানি ও মাটির লবণাক্ততা এবং এর পরিধিও বাড়ছে। মিষ্টি পানির আধারগুলো লবণ পানি দখল করে নিচ্ছে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট বাড়ছে। জীববৈচিত্র্যে (ইকোসিস্টেম) ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি গবেষক ও মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, উজানের মিঠা পানির প্রবাহ না থাকায় সাগরের লবণ পানি উজানে উঠে আসছে। কৃষি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষিজীবীরা জীবন ধারণে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তনে এখন লবণাক্তসহিষ্ণু নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর