শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

ফরিদপুরে কালো সোনা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরে কালো সোনা

পিয়াজ বীজ চাষে এবার হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। দাম বেশি হওয়ায় চাষে লাভবান হচ্ছেন তারা। ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিত এ পিয়াজ বীজ চাষিরা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন বীজ ঘরে তোলার কাজে। সকাল থেকেই পরিবারের বিভিন্ন বয়সীদের নিয়ে খেত থেকে বীজ তোলার কাজ করে সময় পার করছেন চাষিরা। ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আড়াই হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে পিয়াজ বীজের চাষ। চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিঙ্কর চন্দ্র দাস বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের চার হাজার মণের বেশি পিয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে, যার বাজার প্রায় মূল্য ২৮ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন পিয়াজ বীজ শুধু ফরিদপুর জেলাতেই উৎপাদন হবে। তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পিয়াজ বীজের ৬০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে করে থাকে।

 সরেজমিন ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পিয়াজ বীজ কৃষক-কৃষাণিরা বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। অনেক কৃষক-কৃষাণি চুক্তিতে এই কাজে অংশ নিচ্ছে। অম্বিকাপুর এলাকার গোবিন্দপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো আরও অনেকেই জানালেন, এই মৌসুমে তারা বীজ তোলার কাজ করে যে পিয়াজ পায় তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পিয়াজের চাহিদা মিটে যায়। ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক এসেছে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে। এদের মধ্যে আবদুর রহমান, হাফিজুর শেখ জানান, পিয়াজ বীজ তোলার সময় আমাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে এ কাজে। এই সময়টায় ভালো আয় হয় আমাদের। 

এলাকার পিয়াজ বীজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পিয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি তিন মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে। বর্তমানে প্রতি মণ পিয়াজ বীজের দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজারের অধিক। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি আড়াই লাখ টাকার বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভুক্ত পিয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে পিয়াজ বীজের চাষ করছি। খুব ভালো হইছে খেত। আশা করছি ১২ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে। একই গ্রামের মো. বক্তার হোসেন খান বললেন, পিয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পিয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মতো। তিনি জানান, আমাদের এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। তার দাবি, বিএডিসি প্রতিবারের ন্যায় এবারও যেন সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে এই বীজ সংগ্রহ করে। তবেই চাষিরা লাভবান হবে এবং উৎসাহিত হবে এই বীজ চাষাবাদে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ  চক্রবর্তী জানান, ‘এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে এ কারণে এ ফসলকে কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ জেলা পিয়াজ বীজ চাষিদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে, যে কারণে দিন দিন পিয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে।’ ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ফরিদপুরের পিয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবক তাদের কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভের সহজ উপায় হলো পিয়াজ বীজ চাষ। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পিয়াজ বীজ চাষিদের এখন আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর