সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
লন্ডনে শেখ হাসিনা বললেন

অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিন

মাহমুদ হাসান, কাজী শাহেদ ও আ স ম মাসুম, লন্ডন থেকে

বিদেশে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া বিএনপি-জামায়াত চক্র এখন বিদেশে বিভিন্নভাবে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই আপনাদের এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। সত্যকে তুলে ধরতে হবে। গতকাল সকালে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হোটেল সুইটে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ নির্দেশ দেন। অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক এম এ গনি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থ লুটপাট করে বিএনপি-জামায়াত নেতারা এখন সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর জবাব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে দিকনির্দেশনা দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিরূপ পরিস্থিতিতে ইউরোপে কীভাবে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল তা স্মরণ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদের সেই সময় ইউরোপে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সেই নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের যথাযথভাবে মূল্যায়নের পরামর্শ দেন। ১/১১-এর সময়ে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নবীন ও প্রবীণ নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, কেবল দেশের উন্নয়নের কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, সাক্ষাতে বেলজিয়াম, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, ইতালি ও ফ্রান্সের সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ ফিরছেন : জাতিসংঘের পর কমনওয়েলথ সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদস্যভুক্ত ৫৩টি দেশের পূর্ণ সমর্থন আদায় করে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৭টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। আজ সোমবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন ত্যাগের আগে হোটেলের সামনে এবং বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। এর আগে সৌদি আরবে গালফ শিল্ড ওয়ানের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ৬ দিনের সফরে গত সোমবার মধ্যরাতে লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে প্রধানমন্ত্রী দুই দিনব্যাপী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে-সহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। এবারের কমনওয়েলথ সম্মেলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন ও সফলতা হলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ঐকমত্যে নিয়ে আসা এবং তাদের পূর্ণ সমর্থন আদায়। জাতিসংঘের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনেও নিপীড়িত-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বড় বড় দেশের নেতারাও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ এবং বিশাল পরিমাণ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে শুধু মানবিক কারণে দেশটিতে আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ।

একই সঙ্গে এ ইস্যুতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম কর্মঅধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর দেশের অবস্থান এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরও মিয়ানমার সরকার তাদের বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে গড়িমসির বিষয়টিও কমনওয়েলথভুক্ত নেতাদের সামনে তুলে ধরে এ ব্যাপারে সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদাত্ত আহ্বান জানান। সমাপনী দিনে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গৃহীত কমনওয়েলথ সম্মেলনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত লন্ডন ঘোষণার ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। গৃহীত যৌথ ঘোষণায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয় কমনওয়েলথ। শুধু কমনওয়েলথ সম্মেলনই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি উঠে আসে। দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত তার পূর্বের অবস্থান থেকে অনেকদূর সরে এসেছে। দেশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনেও সহযোগিতা করে আসছে। এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দেন। এদিকে লন্ডনে বিএনপির হাতে গোনা কয়েক নেতা-কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ওপর হামলার চেষ্টা এবং সর্বশেষ সফরে আসা একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিদের ক্ষুুব্ধ করে তোলে। শনিবার যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে দেশটির সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশে থাকতেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, এখন লন্ডনে বসেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্র করছে। তবে যেভাবেই হোক তাকে (তারেক রহমান) আমরা দেশে ফেরত আনবই।

লন্ডন থেকে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে হোটেল ক্লারিজে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাৎ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাঁদের মধ্যে রাজনীতি, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।

সর্বশেষ খবর