সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটা নদী এখন ফসলের মাঠ

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২৬তম পর্ব আজ।

জুলফিকার বাবলু, মাদারগঞ্জ (জামালপুর)

মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটা নদী এখন ফসলের মাঠ

এক সময়ের খরস্রোতা ঝাড়কাটা নদী এখন ফসলের মাঠ।  কোথাও আবার পরিণত হয়েছে দিঘিতে। সেই দিঘিতে মাছ শিকার, মানুষ ও গবাদিপশু গোসলের দৃশ্য এখন  নিত্যদিনকার চিত্র। নদীটির উৎপত্তি হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। তখন ইসলামপুর উপজেলার হাড়গিলা নামক স্থানে যমুনা নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙনের ফলে মাহমুদপুর, ঝাড়কাটা, মহিষবাথান, জটিয়ারপাড়া হয়ে সরিষাবাড়ী যমুনা নদীতে মিলিত হয়ে ঝাড়কাটা নদীর সৃষ্টি হয়। সেই সময় হাজার মণের নৌকাসহ নানা রকম নৌকা চলাচল করত এ নদীতে। বড় নৌকায় দোতলা পাল তুলে পাট ধানসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের  বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। নদীটিতে দেশি মাছ ছিল প্রচুর। মাঝি ও নদীপাড়ের মানুষ মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করত। গাঙচিল, মাছরাঙাসহ বিভিন্ন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকত নদী এলাকা। আজ নেই সেই মাছ ধরার দৃশ্য বা পাখির বিচরণ। সেই সময় মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নগুলোয় সড়ক যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে পায়ে হেঁটেও চলাচল ছিল চরম কষ্টের। সেই সময় নৌকাই একমাত্র বাহন ছিল চলাচলের। ভাঙবাড়ী গ্রামের অশীতিপর ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, গুনারীতলা গ্রামের কাজী ঘাইটেল নামে এক লোক গয়না নৌকার ঘাট ডাক নিত। সেই নৌকায় করে এলাকার লোকদের সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারা রাত নৌকায় পাল তুলে, দাঁড় টেনে গন্তব্যে পৌঁছে দিত সে। আমলিতলা নামে একটি ঘাট থেকে  জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য এই গয়না নৌকাই ছিল একমাত্র বাহন। সন্ধ্যা থেকে এই ঘাটে ডাংকা (ঢোল) পেটানো হতো লোকজনকে জানান দিতে যে, গয়না নৌকা সঠিক সময়ে ছেড়ে যাবে সরিষাবাড়ী কেন্দুয়া কালিবাড়ীর উদ্দেশে। গয়না নৌকা যাত্রীদের ভোরবেলায় পৌঁছে দিত গন্তব্যে। সেখান থেকে লোকজন যানবাহনে জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত। বিভিন্ন সময় বালি ও পলি পড়ে নদীটি অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে। এত দ্রুত নদী মরে যাওয়ার কারণ হিসেবে পেশায় শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, নদীর ওপর বেশ কিছু সেতু হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে এখন এটি মৃত। জেগে ওঠা চরগুলো নদীর ধারে যাদের জমি ছিল তারাই দখলে নিয়ে হালচাষ করছে। নদীশাসন বা উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। বর্তমানে নদীটি দেখে মনে হয় না যে এক সময় এ নদীতে প্রবল স্রোত ছিল। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্টদের নদীটি দখলমুক্ত ও খনন করে উপযোগী করতে অনুরোধ করেছেন।

সর্বশেষ খবর