সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

বগুড়ায় বোরো খেতে পাতাপোড়া রোগ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বোরো খেতে পাতাপোড়া রোগ

চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় সবুজ খেতে বোরো ধানের শীষ দেখে হাসিতে ভরে ওঠেছিল কৃষকের মুখ। কিন্তু সেই হাসিমাখা মুখ এখন মলিন হয়ে যাচ্ছে। মাঠের পর মাঠ পচন ধরে পুড়েছে খেত। এতে কপালও পুড়েছে কৃষকের। বৈরী আবহাওয়ায় খেতে রোগের বিস্তার, ওষুধে কাজ না করায় চাষিরা এবার ধান কাটতে পারবেন না। কারণ খেতে শীষ পুড়ে গেছে, চাষের খরচ না ওঠার পাশাপাশি খরচের ধানটুকুও পাবে না। পাকার আগেই খেতের পর খেতে লালচে রং ধারণ করেছে ধানের শীষ। এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।

বগুড়া জেলার ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুরের কিছু এলাকায় ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাস্ট (বিএলবি) রোগ বাংলায় যাকে বলা হয় পাতাপোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ধান খেত। ধুনট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বিএলবি রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব জমির ধানগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধানের মাথায় শীষ বের হচ্ছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খেতের ধানগাছের পাতা শুকিয়ে খড় হয়ে গেছে। ওই সব গাছের মাথায় বের হওয়া শীষও শুকিয়ে খড়ের মতো বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এটাকে পাতাপোড়া রোগ বলে। এই রোগ এক জমি থেকে অন্য জমিতে এবং মাঠে মাঠে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথমদিকে ধানগাছের পাতা পুড়ে বিবর্ণ হয়। এরপর ধীরে ধীরে শীষ ও ধানগাছের গোড়ার দিক আক্রান্ত হয়। এভাবেই ধানগাছের পাতা পুড়ে শীষে থাকা ধান চিটা হয়ে যায়। উপজেলার চিকাশি গ্রামের লিয়াকত আলী বলেন, গত আমন মৌসুমে জমির ধান বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণ করে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। কিন্তু সেই ধানও পাতাপোড়া রোগে শেষ করে দিয়েছে। এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। পারধুনট গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ৫ বিঘা জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খরচ ওঠাই দায়। ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুস ছোবাহান প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির ধান খেত পাতাপোড়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধানগাছের মাথা ছিঁড়ে যায়। বড় ধরনের আঘাতের কারণে ধানগাছের পাতা ও শীষের ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমির ধানগাছ বিএলবি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগ দমনে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গাবতলী উপজেলায় দুই হেক্টর এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার তিন হেক্টর জমিতে ধান লিফ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

গাবতলী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ব্লাস্ট রোগ বাতাসের মাধ্যমে ধান খেতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে আক্রান্ত জমিতে থাকা ধানের শীষগুলো মরে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষতির মুখে পরছে কৃষকরা। এ ঘটনায় গাবতলী উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বে মাঠে মাঠে জরিপ চালিয়ে আক্রান্ত জমিগুলো শনাক্ত করে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়ে কৃষকদের সতর্ক করা হচ্ছে। গাবতলী উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা সোহেল শামস উদ্দিন ফিরোজ জানান, পাতাপোড়া রোগ সম্পর্কে কৃষকদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল এবং ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যারা জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করেছে তাদের জমির ফসল আক্রান্ত হয়নি। অপরদিকে সারিয়াকান্দি কৃষি অফিস থেকেও কৃষকদের এ রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর