সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

মানিকগঞ্জের জমিদারবাড়ি হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জের জমিদারবাড়ি হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

মানিকগঞ্জে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বিশাল দুই জমিদারবাড়ি। অথচ উদ্যোগ নিলেই এ দুই বাড়িকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব। সরেজমিন দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ করা দুই জমিদারবাড়ির একটি রয়েছে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটিতে। ৫.৮৮ একর জায়গার ওপর এটি অবস্থিত। আরেকটির অবস্থান শিবালয় উপজেলার তেওতায়, যা ৭.৭৫ একর জায়গার ওপর অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদারবাড়িটি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। হারিয়ে যাচ্ছে দুর্লভ নিদর্শন। এ বাড়ি দেখতে একসময় বহু পর্যটকের আগমন ঘটলেও এখন দর্শনার্থীর ভিড় কমতে শুরু করেছে। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। পাশাপাশি সংকুচিত হচ্ছে বিনোদনের পরিধি। অন্যদিকে তেওতা জমিদারবাড়িটি এক কথায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনগুলো বেদখল থাকায় কোনোরকম সংস্কারকাজ করা হয়নি। এখানে এখন মাদক সেবন, বিক্রিসহ অসামাজিক কার্যকলাপ জমে উঠেছে। জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি এলাকায় উনিশ শতকে এসব জমিদারবাড়ির ইমারতগুলো নির্মাণ করা হয়। এখনো বালিয়াটি প্রাসাদ চত্বরটি চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা রয়েছে। এখানে সাতটি প্রাসাদতুল্য ভবন রয়েছে, যার ভিতর ২০০ কক্ষ আছে। প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় একটি দৃষ্টিনন্দন রংমহলও রয়েছে, যাতে জমিদার পরিবারের ব্যবহূত নানা নিদর্শন রয়েছে। মানিকগঞ্জে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা না থাকায় জেলার সব শ্রেণির লোক বিনোদনের জন্য এই জমিদারবাড়িতে যান। ঈদ, পূজা, নববর্ষসহ বিভিন্ন জাতীয় দিনে এখানে ভালো লোকসমাগম হয়। তা ছাড়া প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেকে বেড়াতেও আসেন। সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জমিদারবাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সুবিশাল ভবনগুলোর মাত্র একটি ছাড়া সবই ব্যবহারের অনুপযোগী। অন্দরমহলে পাঁচটি পাকা ঘাটসহ একটি পুকুর থাকলেও শুধু খননের অভাবে এটি পরিত্যক্ত হয়ে আছে। জমিদারবাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, ‘এখানে আগতদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। সময় কাটানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে বিড়ম্বনার শিকার হন। অন্দরমহলে শানবাঁধানো অনেক ঘাট থাকা সত্ত্বেও খননের অভাবে পুকুরটি তার জৌলুস হারাচ্ছে। কোটি কোটি টাকারএই সম্পদ থাকার পরও আমাদের রাজস্ব একেবারেই কম। বছরে মাত্র ২৮ লাখ টাকা আয় হয়। দর্শনার্থী আকর্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এখান থেকে সরকারের আয় বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।’ অনেকেরই অভিমত, একটু নজর দিলেই জমিদারবাড়িটি হতে পারে এ অঞ্চলের বিনোদনের কেন্দ্রস্থল। এ ছাড়া তেওতা জমিদারবাড়িটি সংস্কার না করায় এবং অযত্নে অবহেলায় বেশির ভাগ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই জমিদারবাড়িতে পাঁচটি বৃহৎ ভবন রয়েছে। ভবনগুলোয় ৫৫টি কক্ষ আছে। অরক্ষিত জমিদারবাড়িতে দিনরাত মাদকসেবীদের আনাগোনা চলছে। এলাকাবাসী দুঃখ প্রকাশ করে জানান, শুধু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এখানে পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে প্রাচীন দুর্লভ নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে গেছে। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়িটি বেদখলে ছিল। এখন এটি দখলমুক্ত। দুই বছর আগে বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে এটিকে বিনোদনের উপযোগী করা দরকার। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এলাকাটি নদীপথ ও সড়কপথ উভয় দিক দিয়েই ব্যবহারের উপযোগী। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে এ জমিদারবাড়িটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে রক্ষা পাবে দেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। আর সরকারও পাবে রাজস্ব।

সর্বশেষ খবর