বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চার কৌশলে অর্থ পাচার

বিআইবিএমের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চারটি কৌশলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ট্রেড সার্ভিস অপারেশন অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় অধ্যাপক শাহ মোহা. আহসান হাবিব এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মূলত চারটি কৌশলে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। কৌশলগুলো হচ্ছে— আমদানি-রপ্তানিতে পণ্য ও সেবার ওপর ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং করা, শিপমেন্টের ওপর আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং করা; আমদানি-রপ্তানিতে বহুমাত্রিক ইনভয়েসিং করা এবং রপ্তানি পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া। তিনি বলেন, যেসব পণ্য আমদানিতে কম শুল্ক দিতে হয়, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রপাতি, সেগুলোর আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। আবার সরকারি প্রণোদনা পেতে রপ্তানি পণ্যে বেশি মূল্য দেখানো হয়। একই সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্যের প্রমাণ রয়েছে। অনুষ্ঠানে এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনার মঈনুল খান বলেন, অর্থ পাচারের ৮০ শতাংশই ট্রেডের মাধ্যমে হচ্ছে। বর্তমানে এটা প্রতিরোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থ পাচার বন্ধে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আরও যাচাই-বাছাইয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়েন। ব্যাংকগুলোকে অর্থ পাচারের কৌশল তদারক করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, এটি খুবই আশঙ্কার বিষয় যে, ৮০ শতাংশ অর্থ পাচারই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। শুধু অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মহা সমস্যায় আছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

এইচএসবিসি ব্যাংকের কান্ট্রি হেড অব গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসিভ্যাবলস ফিন্যান্স মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান বলেন, অর্থ পাচার  রোধে প্রথমে ব্যাংককেই ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন করলেই অর্থ পাচার কমে আসবে। এলসি গ্যারান্টি ও ফি কমানোর  জন্য বাংলাদেশকে ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য হওয়ার পরামর্শ দেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী। বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানও ব্যবসাভিত্তিক অর্থ পাচার বাড়ার কথা স্বীকার করেন। অর্থ পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইউ) তৎপর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল প্রতিটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরাও নতুন গাইডলাইন করতে যাচ্ছি।’ এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ডেপুটি গভর্নর রাজী হাসান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর