বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপনে সর্বনাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

বিজ্ঞাপনে সর্বনাশ

রাজধানীর আদাবর থানা এলাকার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু আমিনুল ইসলাম ওরফে সুমন বিক্রয় ডটকমে তার দামি মোবাইল ফোনটি বিক্রি করতে বিজ্ঞাপন দেন। আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ক্রেতা পেয়ে যান। তার ফোনে কল করে এক ক্রেতা ফোনটি কিনতে চায়। সুমন তাকে আদাবরে আসতে বলেন। শেখেরটেকের ১ নম্বর সড়কের ইসলামী ব্যাংকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন সুমন। সঙ্গে নিয়ে যান তার দামি ফোনটিও। কিছু সময় পর তার ফোনে আবারও কল আসে। সেই ক্রেতাই তাকে ফোন করেছে। সুমন তার লোকেশন জানিয়ে দেন। এক মিনিটের মধ্যেই একটি মাইক্রোবাস তার সামনে এসে থামে। মাইক্রোবাস থেকে দুই যুবক নেমে আসে। সুমনের কাছে তারা নিজেদের নাম বলে শরিফ ও শাহাদৎ। মাইক্রোবাসের ভিতর বসা আছে আরও দুজন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। শরিফ এ সময় সুমনকে বলে গাড়ির ভিতর উঠে বসতে। সুমন সরল বিশ্বাসে মাইক্রোবাসে উঠে বসে। আর কোনো কথা নেই। মাইক্রোবাসের দরজা-জানালা লক করে দেওয়া হয়। ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দেয় মাইক্রোবাসে আসা ফোনের ক্রেতারা। মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করে। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসায় সুমনের বাবা রফিকুল ইসলাম চিন্তিত হয়ে পড়েন। সুমনের ফোনটিও বন্ধ পান তিনি। কোথায় গেল ছেলেটি— এমন প্রশ্ন মনের ভিতর উঁকি দিচ্ছে রফিকুলের। আরও কিছু সময় যেতে  সুমনের বাবা-মা অস্থির হয়ে পড়েন। হঠাৎ সুমনের নাম্বার থেকে ফোন আসে রফিকুলের ফোনে। হ্যালো বলতেই রফিকুল বুঝে ফেলে যে, এটা তার ছেলের কণ্ঠ নয়। তিনি সুমনকে চান। অপরপ্রান্ত থেকে রফিকুলকে বলে, ‘১০ লাখ টাকা না দিলে আপনার ছেলেকে আর পাবেন না। আপনার ছেলের কণ্ঠ চিনতে পারেন কিনা দেখেন।’ এরপরই রফিকুল ইসলাম তার ছেলে সুমনের চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। রফিকুল হ্যালো হ্যালো বলতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, ছেলে তার অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়েছেন। কী করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি। অপহরণকারীদের একজন রফিকুলকে বলেন, ‘আপাতত আপনার ছেলের খাওয়া-দাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পাঠান। আর মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা কোথায় দিতে হবে, তা পরে জানাব।’ রফিকুলের ফোনে একটি মেসেজ আসে। তাতে একটি বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়। রফিকুল দ্রুত বিকাশ নাম্বারে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপরই ফোন বন্ধ। এভাবেই মহাটেনশনে সারা রাত কাটিয়ে দেন রফিকুলের পরিবার। পরদিন তারা পুলিশের সাহায্য নেন। কিন্তু পুলিশ কিছুই করতে পারছিল না। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। মোবাইল ফোনের ট্র্যাকিং করে তোপখানা রোডের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে সুমনকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে অপহরণকারীরাও গ্রেফতার হয়।  পুলিশ জানায়, সুমনকে হোটেলে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে কান্নাকাটির শব্দ মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে শুনায়। পরে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকা না দিলে সুমনেক হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। চক্রের সদস্যরা ফেসবুক ও অনলাইনে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এভাবেই অপহরণের ফাঁদ পেতে রাখে। অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন হোটেলের মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিকাশ এজেন্টদের যোগসাজশ রয়েছে।

আরও প্রতারণা : ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপ মাত্র ২৫০০০ টাকা! দেখেই মাথা খারাপ সোহানের। এত কম কেন? বিজ্ঞাপনে আবার লেখা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে ব্যবহার করতে পারি না বলে সেল করে দিচ্ছি। সোহান ভেবে নিল অন্তত আর যাই হোক নষ্ট তো না, ইউজ করতে পারে না বলে সেল করে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনের নাম্বারে ফোন দিতেই এক সুকণ্ঠি মেয়ে ফোন ধরে বলল, বিদেশ থেকে গিফট দিয়েছে আঙ্কেল, ইউজ করা হয় না বলে কম দামে সেল করে দেব। সোহান আর অত চিন্তা করল না, তাকে বলে দিল সে নেবে। মেয়েটি জানাল মগবাজার থেকে কালেক্ট করতে হবে। ভালো লাগলে ক্যাশ টাকা দিতে হবে। খুশিতে বাগবাকুম হয়ে মগবাজার গেল। ল্যাপটপ তো দূরের কথা, সঙ্গে যা ছিল সব রেখে দিল সেই বিজ্ঞাপন দেওয়া ছিনতাইকারী দল।

সেল-বাজারে আইফোন ৫ এর অ্যাড দেখে ফোন দিল ফারুক। দাম অনেক কম, মাত্র ১৬ হাজার। লোকেশন চট্টগ্রাম। এত কম দামে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন। কথা হলো সবকিছু ঠিকঠাক। ৩০% টাকা অ্যাডভান্স, বাকিটা এস এ পরিবহনে পণ্য পেয়ে। অ্যাডভান্স দিয়ে দিল ফারুক। তারপর বিজ্ঞাপন উধাও, ফোন নাম্বার অফ! আর আসেনি তার আইফোন ৫। অল্প দামে ল্যাপটপ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে ফোন দেয় রাজু। একটি মেয়ে ফোন ধরে তাকে ফার্মগেট আসতে বলল।  রাজু ফার্মগেট গিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, চলুন ভাইয়া। ল্যাপটপটি আছে আইডিবি ভবনে। মেয়েটা সামনের সিএনজি দেখিয়ে প্রস্তাব দিল সিএনজিতে যাবে এবং রাজুকে ভাড়া দিতে দেবে না। হাসিমুখে রাজু মেনে নিল। ফলাফল দিনেদুপুরে পথে পিস্তল ধরে ব্যাগ, মানিব্যাগ, মোবাইলসহ যা যা ছিল রেখে নামিয়ে দিয়ে সিএনজি উধাও। পুলিশ জানায়, এমন চক্র রাজধানীসহ সারা দেশেই সক্রিয়। বিভিন্ন অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েই এ চক্রটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে থাকে। পরে মোটা অংকের মুক্তিপণ নিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়। এ ধরনের অপরাধ তারা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর