বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাসে ছাত্রী হয়রানি প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

তিন দিনের রিমান্ডে চালক হেলপার-সুপারভাইজার - আন্দোলন স্থগিত

সাখাওয়াত কাওসার

দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে বেলা ১টা ১৩ মিনিট। গত ২১ এপ্রিল বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ পরিবহনের ওই বাসে ওঠেন বোরকা পরিহিত উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। বেলা ঠিক ১টা ১৩ মিনিটে বাস থেকে নামেন যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীতে। এই ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ শনাক্তের পর চালক রোমানকে তার দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করলে তাদের শনাক্ত করেছেন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী। গতকালই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস ওঁঝার ৭ দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম গোলাম নবী গতকাল প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিনজন হলো— তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের চালক রোমান, তার সহকারী নয়ন ও মনির। গত সোমবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সায়েদাবাদ থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম। আমি নিজে বাড্ডা লিংক রোড থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করেই ভুক্তভোগীর সহায়তায় ওই গাড়ি এবং হেলপারকে শনাক্ত করেছি। দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে বেলা ১টা ১৩ মিনিটের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ অপরাধীই গ্রেফতারের পর তার অপরাধ কবুল করে না। এখন রিমান্ডে আসছে দেখা যাক! তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতারকৃতরা দাবি করছে গাড়িতে আরও যাত্রী ছিল। কোনো যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেনি। তবে ওই ছাত্রী বলেছেন, নতুন বাজার পর্যন্ত আসতে আসতে সব যাত্রী নেমে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে প্রথমে হেলপার নয়ন পরবর্তী সময়ে মনির তাকে উত্ত্যক্ত করেছিল। তাতে সায় দিয়েছিল চালক রোমান। কৌশলে তিনি তাদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসেন। পরদিন রবিবার বিকালে ওই ছাত্রীর স্বামী বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন।

এদিকে গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস ওঁঝা তার আবেদনে উল্লেখ করেন, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রীর সঙ্গে বাসের হেলপার নয়ন ও চালক রোমানসহ তিনজন অশ্লীল কথাবার্তার পাশাপাশি যৌন হয়রানি করেন। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবগত হওয়ার পরপরই রবিবার যাত্রাবাড়ী থেকে আবদুল্লাহপুরগামী তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। অভিযুক্ত বাসচালক ও তার সহকারীকে গ্রেফতারে তারা গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। ব্যর্থ হলে আটকে রাখা বাসের কোনো ক্ষতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নেবে না বলে ঘোষণাও দেন তারা। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হওয়ার পরই সোমবার রাতে বাসগুলো পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

প্রতিবাদকারী ছাত্র পরিষদের সমন্বয়ক উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হোসেন বলেন, আমদের বিশ্বাস আন্দোলনের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নে জড়িত বখাটেরা ধরা পড়ায় আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। তবে আমরা এ ধরনের ঘটনা আর দেখতে চাই না। ফের যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে বাস মালিক সমিতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ২০ দফা দাবি পেশ করা হবে।

সর্বশেষ খবর