বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাগুরার নদীগুলো এখন মরা খাল

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে নদী। নদী বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২৮তম পর্ব আজ।

রাশেদ খান, মাগুরা

মাগুরার নদীগুলো এখন মরা খাল

মাগুরা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫টি নদীতে বড় বড় নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করেছে তা এ প্রজন্মের (স্বাধীনতা পরবর্তী) কেউ দেখেছে এমনটি বলতে পারে না। সেগুলো এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। তবে তারা সবাই বাপ-দাদার কাছে গল্প শুনেছে। নদীতে এক সময় নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার চলত। সে সময় মাগুরার মানুষের চলাচল ছিল নদী কেন্দ্রীক। সময়ের বিবর্তনে নদী শুকাতে শুকাতে বড় বড় চর পড়তে শুরু হয়। সে সময় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে নদীগুলো শুকিয়ে  নৌযানগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শুরু হয় নদী পাড়ে প্রভাবশালীদের দখল প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে সেখানে তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি নদীর বুক জুড়ে চলছে ধানচাষ। নদী শুকিয়ে সঙ্কুচিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ফসলি জমি ও বসত বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

মাগুরা ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ আহ্বায়ক সৈয়দ বারিক আনজাম বারকি জানান, মাগুরা শহরের প্রাণ নবগঙ্গা নদী। বিভিন্ন মহলের দখলদারিত্বতো আছেই সেসঙ্গে দীর্ঘদিন নদীটির সংস্কার না করার পাশাপাশি শহরের নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পানি ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে আসায় শুকনা মৌসুমে যেটুকু পানি থাকে সেটাও মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে আমরা নদী বাঁচাও ব্যানারে লিফলেট বিতরণ, মানববন্ধনসহ র‌্যালি করেছি। কিন্তু প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা আমাদের চোখে পড়েনি। কবি ও সাহিত্যিক বিরেন মুখার্জি জানান, শালিখা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির নাম ফটকি নদী। এই নদীতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। এখন নদীটি একটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা এ নদীর বুকে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলায়। এ সময় ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষা মৌসুমে নতুন করে মাছের জন্ম হচ্ছে না।

শ্রীপুর উপজেলার ওপর দিয়ে গড়াই, কুমার ও হানু— এই ৩টি নদী বয়ে গেছে। গড়াই ও কুমার নদের সংযোগ বা শাখা নদী হচ্ছে হানু নদী। এ নদীটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। গড়াই নদীতে চর পড়লেও বর্ষাকালে প্রচণ্ড প্রতাপে ফিরে আসে। কুমার নদে পলি জমে ভরাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে নিজের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। পাশাপাশি হানু নদীর কোনো চিহ্নই এখন অবশিষ্ট নেই। সেখানে পলি জমতে জমতে এখন ফসলি মাঠে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও বসত বাড়ি, এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দখল করে ফলের বাগান তৈরি করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আহসান উল্লাহ শরাফি জানান, দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার লম্বা হানু নদীটি আমরা গত বছর থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এ নদীটির পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্থানেই প্রভাবশালীরা পাকা বসতি স্থাপন করেছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অর্থের জোগান না থাকায় দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর