বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চালু হচ্ছে হাইস্পিড রেল

মানিক মুনতাসির

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সময়ের দূরত্ব কমিয়ে আনতে চালু হচ্ছে হাইস্পিড রেল। এ জন্য নতুন একটি রেলপথ নির্মাণ করা হবে, যেটি ঢাকা থেকে কুমিল্লার লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম গিয়ে পৌঁছবে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিশদ ডিজাইন ও নির্মাণ কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগের একটি দরপ্রস্তাব আজ সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপনের কথা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের বাইরে থাকায় রীতি অনুযায়ী বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করবেন। আজকের বৈঠকের কার্যসূচি ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাবনার তথ্যমতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। সেই সঙ্গে সময়ের দূরত্বও কমে আসবে। হাইস্পিড ট্রেনে মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে। এ ট্রেন ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে চলবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ নকশার কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এ জন্যই পরামর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে। ঢাকা-থেকে চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। হাইস্পিড রেলওয়ে চালু হলে ট্রেনের গতি অনুযায়ী দূরত্ব কমে যাবে অন্তত ৯০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। তবে এটা কমবেশি হতে পারে। দুই বছর মেয়াদে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইনের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবির অর্থায়নে (সরকারের নিজস্ব তহবিল) বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, এর আগে ৮ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে সেকশন বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করিডর। এ করিডরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার। বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেন বৃত্তাকার পথে টঙ্গী-ভৈরববাজার-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এতে সময়ের প্রয়োজন ছয় থেকে আট ঘণ্টা। প্রস্তাবিত দ্রুতগতির রেলপথটি যাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মধ্য দিয়ে। এ পথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা/লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেনলাইন নির্মাণ করা হলে সেকশনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে। একই সঙ্গে যাতায়াতের সময়ও কমবে প্রায় দুই ঘণ্টা। এতে যাত্রীদের সময় বাঁচার পাশাপাশি রেলের পরিচালন ব্যয়ও (অপারেটিং কস্ট) কমবে। একইভাবে কমবে পরিবহন ব্যয়। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রধান আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়তে থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের অর্থনৈতিক গুরুত্বও দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের মাতারবাড়ীতে ‘পাওয়ার হাব’ (বড় বিদ্যুেকন্দ্র) এবং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়ন কার্যক্রম ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের গুরুত্ব আরও বাড়াবে। এই করিডরে ভ্রমণ সময় কমিয়ে আনা গেলে তা বিদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দ্রুতগতির রেলওয়ে সার্ভিস চালু হলে এই করিডরে দুই ঘণ্টার চেয়ে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। এই সার্ভিস ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটকে করে তুলবে আরও বেশি আকর্ষণীয়। ফলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, মোহনপুর, ময়নামতি, লাকসাম, ফেনী, চিনকি আস্তানা, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ রেলওয়ের সম্ভাব্য রুট হতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনা মাথায় রেখে এ প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ১২ জোড়া ট্রেনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যায়। আগামী ১০ বছরে এ রুটে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭৯ লাখ। তখন বিপুলসংখ্যক এ যাত্রী পরিবহনে কমপক্ষে ২৮ জোড়া ট্রেন চালাতে হবে। আর ২০ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বছরে প্রায় এক কোটি যাত্রী চলাচল করবেন। এসব যাত্রী পরিবহনে তখন দৈনিক ৪২ জোড়া ট্রেন চালানোর প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান রেলপথ ও কোচ দিয়ে এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য হাইস্পিড ট্রেন চালু করা জরুরি বলে মনে করে সরকার। শুধু তা-ই নয়, যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি এ পথে বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ টন পণ্য পরিবহন করাও সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সর্বশেষ খবর