বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফের চালু হবে আরিচা নগরবাড়ী ফেরিঘাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল পারাপারে আবারও আরিচা-নগরবাড়ী ফেরিঘাট চালু করতে চাইছে সরকার। এ ঘাট দিয়ে নির্মাণসামগ্রী পারাপার করা গেলে সড়কপথে দূরত্ব কমার পাশাপাশি সময়ের অপচয় কমবে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। এর ফলে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ এপ্রিল একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সিমেন্টের ট্রাকসহ নির্মাণ উপকরণ দ্রুত পৌঁছাতেই পুরনো এ ঘাটটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ, ঢাকা থেকে নির্মাণসামগ্রী যমুনা সেতু অথবা বর্তমানে চালু থাকা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করে নিতে গেলে যানজটের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এসব পথে দূরত্বও অনেক বেশি পড়বে। এতে প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, ৮ এপ্রিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় নৌপথের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় মালামাল সুষ্ঠুভাবে পরিবহনের উদ্যোগ নিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জ্ঞান রঞ্জন শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী এ ঘাটটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতিও আছে। প্রকল্পের মালামাল যেদিন ফেরিঘাটে পৌঁছাবে সেদিন থেকেই ফেরি চলবে। তবে এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই বন্যার কারণে আরিচা-নগরবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ রুটে ফেরি চলাকালে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন পার হতো। জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় এ রুটে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করত বেশি। উত্তরাঞ্চলের পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ; দক্ষিণাঞ্চলের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ জেলার ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনও এ রুট দিয়ে চলাচল করত। ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় এসব জেলার পরিবহনগুলোকে এখন পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর জেলার ১৫০ কিলোমিটার ঘুরে রাজধানী ঢাকায় যেতে হচ্ছে। অথচ ফেরি চালু হলে মাত্র ৫ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিলেই মানিকগঞ্জের আরিচায় পৌঁছানো সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে নগরবাড়ী-আরিচা রুটের ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে এটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবেও এটি খ্যাতি পায়। আশির দশকের শেষ দিক থেকে এ রুটে তিন তলা রো রো ফেরি চালু করা হয় এবং ১৯৯৭ সালে যমুনা সেতু চালুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ছয়-সাতটি রো রো ফেরি চলাচল করত। যমুনা সেতু চালুর পরও ছিল তিন-চারটি রো রো ফেরি। কিন্তু ২০০৭ সালে বর্ষার শুরুতে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২১ জুলাই থেকে প্রথম দফা ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটটি এক কিমি উজানে রঘুনাথপুরে প্রতিস্থাপন করে পুনরায় চালু করা হলেও ৩০ জুলাই থেকে ওই ঘাট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবহন মালিকসহ স্থানীয় জনসাধারণের ব্যাপক দাবির মুখে তখন রো রো ফেরি নয়, কে টাইপের কস্তূরী নামে একটি ফেরি দিয়ে ২০০৮ সালের ২ মে নগরবাড়ীর ভাটিতে কাজিরহাট থেকে পারাপার শুরু হয়। কিন্তু এক দিন পর একমাত্র পারাপারের মাধ্যম কস্তূরী অচল হয়ে পড়লে সেটি পাঠানো হয় পাটুরিয়া নৌ-মেরামত কারখানায়। সেই থেকে এ ঘাট একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। পরে অবশ্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পাবনায় এক কর্মসূচিতে আশ্বাস দিয়েছিলেন নগরবাড়ী ফেরিঘাট চালুর উদ্যোগ নেওয়ার। তবে এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর